High Court has ordered the demolition of a 26-storeyed tower

নিউ টাউনের ২৬তলা বহুতলের টাওয়ার ভাঙার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট

এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত প্রোমোটার সংস্থার কর্তারা এবং নিউ কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ)-র ইঞ্জিনিয়ার ও আধিকারিকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে যোগসাজশের প্রমাণ মিলেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং ফৌজদারি মামলা চালানোরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

এলিটা গার্ডেন ভিস্তা প্রকল্পের কাল্পনিক ছবি।
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা
  • শেষ আপডেট:০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০১:৫৬

নিউ টাউনের একটি আবাসন প্রকল্পের মধ্যে তৈরি ২৬তলা টাওয়ার ভাঙার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। এই প্রকল্পে অনুমোদনের জন্য প্রতারণা, দুর্নীতি এবং প্রভাব খাটানোর অভিযোগ উঠেছিল মার্লিন সংস্থার কর্ণধার সুশীল মোহতা এবং অন্যদের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই এরকম কড়া নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

নিউ টাউনের ‘এলিটা গার্ডেন ভিস্তা আবাসন’ প্রকল্পের কয়েকজন ফ্ল্যাট মালিকের দায়ের করা রিট পিটিশনের ভিত্তিতেই এই রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ‘এলিটা গার্ডেন ভিস্তা প্রাইভেট লিমিটেড’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুশীল মোহতা এবং ফুলটাইম ডিরেক্টর প্রকাশ বছাওয়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। 

হাই কোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা এবং বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে জানিয়েছেন, জালিয়াতি করে এই প্রকল্পের অনুমোদন নেওয়া হয়েছিল। তাই দু’মাসের মধ্যে ওই বেআইনি বহুতল ভেঙে ফেলতে হবে প্রোমোটারদের। এর মধ্যে প্রথম এক মাসেই ফ্ল্যাট মালিকদের সরিয়ে নেওয়ার সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। 

নির্দেশে আরও বলা হয়েছে, প্রোমোটারেরা যদি নির্দিষ্ট সময়ে টাওয়ার না ভাঙেন, তাহলে এনকেডিএ এই বহুতলটি ভাঙার কাজ শেষ করবে এবং তার খরচ প্রোমোটারদের থেকেই আদায় করা হবে। পাশাপাশি, সমস্ত ফ্ল্যাট ক্রেতাদের ৭ শতাংশ সুদ-সহ টাকাও ফেরত দিতে হবে।

প্রোমোটারের আইনজীবী অভ্রজিৎ মিত্র আদালতের এই রায় স্থগিত রাখার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আবেদনও নাকচ করে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।

বিচারপতি মান্থার লেখা ৯৪ পাতার রায়ে উচ্চ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ২০১৫ সালে জালিয়াতি ও তথ্য গোপন করার মাধ্যমে সংশোধিত অনুমোদন পরিকল্পনা জোগাড় করা হয়েছিল। রায়ে বলা হয়েছে, ‘এনকেডিএ আইনের একাধিক ধারা এবং পশ্চিমবঙ্গ অ্যাপার্টমেন্ট ওনারশিপ অ্যাক্ট ও প্রোমোটার অ্যাক্টের বিধান লঙ্ঘন করেছে প্রোমোটার গোষ্ঠী। সেই কারণে ২০১৫ সালের ২০ আগস্টের সংশোধিত অনুমোদন বেআইনি এবং এনকেডিএ আইনের ৮১ ধারা অনুযায়ী তা বাতিল করা হল।’

২০০৭ সালে ‘কেপেল ম্যাগাস প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থা প্রকল্পের অনুমোদন নিয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল ২৩ তলার ১৫টি টাওয়ার, মোট ১২৭৮টি ফ্ল্যাট, ১৬৮৮টি পার্কিং স্পেস এবং অন্যান্য সুবিধা তৈরি করার। সেই অনুযায়ী ফ্ল্যাট ক্রেতাদের ভূমির অংশীদারিত্ব দেওয়া হয় ২০১০ সালে, এবং রেজিস্ট্রেশন হয় ২০১২ সালে।

২০১৪ সালে কেপেল সংস্থা তাদের মালিকানা বিক্রি করে ‘এলিটা গার্ডেন ভিস্তা প্রাইভেট লিমিটেড’কে, যেখানে যুক্ত ছিলেন সুশীল মোহতা, যিনি কনফেডারেশন অফ রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার্স এসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (ক্রেডাই)-র পশ্চিমবঙ্গের প্রেসিডেন্টও, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সুরেকা গোষ্ঠীর প্রদীপ সুরেকা এবং জেবি গ্রুপের প্রকাশ বছাওয়াত।

আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বর্তমান ফ্ল্যাট মালিক বা জমির মালিকদের অগোচরে নতুন প্রোমোটার ২০১৫ সালের ২০ অগস্ট, একটি সংশোধিত পরিকল্পনার মাধ্যমে খোলা জায়গার উপরেই গড়ে তোলেন ২৬ তলার নতুন টাওয়ার এবং একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স।’

২০১৭ সালে ফ্ল্যাট মালিকরা জানতে পারেন, এই প্রকল্পে ১৫টির বদলে ১৬টি টাওয়ার এবং মোট ফ্ল্যাট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫৮৮-তে। তাতে তাঁদের জমি ও সাধারণ এলাকার অংশীদারিত্ব কমে যায়, এবং খোলা জায়গা ৬০০ বর্গমিটার পর্যন্ত কমে যায়।

২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল ও ২০ মে ফ্ল্যাট মালিকরা এনকেডিএ-কে লিখিত অভিযোগ জানান এবং ওই সংশোধিত পরিকল্পনার নির্মাণ বন্ধের দাবি তোলেন। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ না হওয়ায় তাঁরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।

প্রথমে সিঙ্গল বেঞ্চ বেআইনি অনুমোদন ও নির্মাণের প্রাথমিক ভিত্তি আছে মনে করে সেই মামলা খারিজ করে দিয়েছিল। পরে ফ্ল্যাটের মালিকেরা ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করেন এবং সেখানেই এই ঐতিহাসিক রায় দেওয়া হয়েছে।

ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, প্রোমোটাররা প্রতারণা এবং বেআইনি উপায়ে পরিকল্পনার অনুমোদন জোগাড় করেছেন এবং প্রকল্পের মূল মালিকদের ঠকিয়েছেন। প্রোমোটারের আচরণ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ উল্লেখ করেছেন, তিনি ‘প্রতারণামূলক এবং বেআইনিভাবে’ কাজ করেছেন এবং ‘১৫ টাওয়ারের মালিকদের পাশাপাশি ১৬তম টাওয়ারের মালিকদেরও স্পষ্টভাবে প্রতারিত করেছেন’।

বেঞ্চের মন্তব্য, প্রোমোটার ‘অবৈধভাবে এবং গোপনে’ ১৬তম টাওয়ার নির্মাণের জন্য সংশোধিত পরিকল্পনার অনুমোদন নিয়েছিলেন। পাশাপাশি, এনকেডিএ তাদের আইনমাফিক দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এই প্রকল্পের প্রোমোটারদের পাশাপাশি নিউ কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ)-র যে সমস্ত ইঞ্জিনিয়ার ও আধিকারিকদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে যোগসাজশের প্রমাণ মিলেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং ফৌজদারি মামলা চালানোরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।


Share