TMC Inner Clash

মমতার সফরের আগে কোচবিহারে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল চরমে, অমর রায় খুনের ফাঁসানোর অভিযোগে সরব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ

মমতার সফরের প্রাক্কালে কোচবিহার তৃণমূলে গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে। অমর রায় খুনে ফাঁসানোর অভিযোগে প্রাক্তন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথের সরাসরি নিশানা উদয়ন গুহ ও অভিজিৎ দে ভৌমিকের বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার দাবি মৃতের পরিবারের।

তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।
নিজস্ব সংবাদদাতা, কোচবিহার
  • শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৪৭

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তরবঙ্গ সফরের তিন দিন আগে কোচবিহার জেলা তৃণমূলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে। শনিবার রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ সরাসরি অভিযোগ তুললেন দলীয় মন্ত্রী উদয়ন গুহ এবং জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিকের বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, অমর রায় খুনের ঘটনায় তাঁকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করছেন এই দুই নেতা। রবীন্দ্রনাথের ঘোষের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমাকে হেয় করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছেন দু’জন। তাঁরা হলেন উদয়ন গুহ এবং অভিজিৎ দে ভৌমিক।’’

গত ৯ অগস্ট কোচবিহারের ডোডেয়ারহাটে ভরা বাজারে গুলিতে খুন হন যুব তৃণমূল নেতা অমর রায়। ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার হলেও অমরের বাবা-মায়ের অভিযোগ, মূল অভিযুক্তেরা এখনও ধরা পড়েননি। তাঁরা চান ৯ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহারে এলে তাঁর সঙ্গে দেখা করে ন্যায়বিচারের আবেদন জানাতে।

অভিযোগের তালিকায় রয়েছে রবীন্দ্রনাথের নামও। দম্পতির দাবি, পুন্ডিবাড়ি থানার ওসি হলেন রবীন্দ্রনাথের পুত্রবধূ, ফলে তদন্তে পক্ষপাতের আশঙ্কা রয়েছে। তাই মামলাটি অন্য থানায় স্থানান্তরের দাবি জানান তাঁরা।

রবীন্দ্রনাথ অভিযোগ তুলেছেন, উদয়ন গুহ ও অভিজিৎ দে ভৌমিক তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার চেষ্টা করছেন। কাউন্সিলরদের দিয়ে সই করানো থেকে শুরু করে নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও দাবি তাঁর।

উদয়নের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘ও বলছে, ও জানে।’’ জেলা সভাপতি অভিজিৎ অবশ্য বলেন, রবীন্দ্রনাথ এমন ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন না। তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে তিনি নীরব থাকেন।

কোচবিহার তৃণমূল সাংসদ জগদীশচন্দ্র বসুনিয়া রবীন্দ্রনাথের নাম না করেই কটাক্ষ করেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ যে যে অভিযোগ করেছেন, সেটা ওঁর ব্যক্তিগত বিষয়।’’ কোচবিহার রাসমেলার মাঠে মমতার সভার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে এসে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই সভার প্রস্তুতির জন্যও সকল নেতাকে ডাকা হয়েছে। তার পরেও যদি কেউ না আসেন, ইচ্ছাকৃত ভাবে না শোনার ভান করেন, তাতে আমাদের কিছু করার নেই। আসলে জেলা সভাপতি হিসাবে অভিজিৎ সফল হোন, সেটা অনেকেই চান না। তা-ই বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে বৈঠকে এড়িয়ে যান।"

এই গোষ্ঠীকোন্দল ঘিরে তৃণমূল নেতাদের ‘দলে আসার’ আহ্বান জানিয়েছেন কোচবিহার জেলা বিজেপি সভাপতি অভিজিৎ বর্মণ। তিনি বলেন, ‘‘কোচবিহারে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বরাবরই দ্বন্দ্ব চলে। ২০২৬ সালে এমনিতেই তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদায় নেবে। কংগ্রেস, সিপিএম থেকে গিয়ে কিছু নেতা কোচবিহার জেলা তৃণমূলকে পরিচালনা করছেন। পুরনো নেতা এবং কর্মীদের তাঁরা ছেঁটে দিচ্ছেন। আমরা তাঁদের উদ্দেশে বলছি, আমাদের দরজা খোলা আছে। চলে আসুন।’’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সফরের আগে তৃণমূলের অন্দরে এই প্রকাশ্য সংঘাত রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক চর্চার জন্ম দিয়েছে।


Share