ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ বাতিলের প্রতিবাদে রণক্ষেত্র মুর্শিদাবাদের একাংশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি চালাতে হয় পুলিশকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ বার মুর্শিদাবাদে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। রাজ্যের বেশ কয়েকটি জেলায় অশান্তির অভিযোগ তুলে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার জরুরিভিত্তিতে শুনানিতে বিচারপতি সৌমেন সেন এবং রাজা বসু চৌধুরী ডিভিশন বেঞ্চ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে। তবে রাজ্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না তারা। তারা শুধু মাত্র পুলিশকে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছে হাই কোর্ট।?
ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৫ বাতিলের প্রতিবাদে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে মুর্শিদাবাদের একাংশ। আজ, শনিবার ভবানী ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার বলেন, “বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেখানে এডিজি, আইজি এবং এসপি পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিকদের মোতায়েন করা হয়েছে।” এ দিন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী আদালতকে জানান, তিন দিন আগে জঙ্গিপুরের ঘটনার পর থেকে উত্তপ্ত হয়েছে রাজ্যের একাধিক জেলা। রাজ্যের গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরির বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দুর আইনজীবী বলেন, “রাজ্যের গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর উস্কানিমূলক বক্তব্যের জেরে জঙ্গিপুররে অশান্তি ছড়িয়েছে। তার পর জোকা থেকে রাজারহাট, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনায় অশান্তি ছড়িয়েছে।” এর পরই বিচারপতি জানতে চান, “মুর্শিদাবাদে অনেক অশান্তি হয়েছে। ওই জেলা ছাড়া আর কোন কোন জেলায় অশান্তি হয়েছে?”?
এ দিন রাজ্যের আইনজীবী বলেন, “মুর্শিদাবাদে যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সেখানে এডিজি, আইজি এবং এসপি পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিক মোতায়েন রয়েছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।” শুভেন্দুর আইনজীবী জানান, “পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক।” বর্তমানের পরিস্থিতি কী? জানতে চান বিচারপতি। রাজ্য একদিনের সময় চাইলে, আধ ঘণ্টার মধ্যে বর্তমানের পরিস্থিতি সম্পর্কে রিপোর্ট তলব করেন বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ।?
দ্বিতীয় পর্বের শুনানিতে বিচারপতি সৌমেন সেন জানতে চান, “বিএসএফ-কে ডেকেছে? জেলা শাসক?” রাজ্য সরকার তা মেনে নিয়ে বলে, “বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। ১১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার নিজে ওই এলাকায় যাচ্ছেন।” শুভেন্দু অধিকারী আইনজীবী বলেন, “ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক। পুলিশ পারছে না। ধুলিয়ানে এখনও বোমাবাজি হচ্ছে।” কিন্তু তাতে আপত্তি জানান রাজ্যের আইনজীবী। আদালত তখন মৌখিক ভাবে জানায়, কেন্দ্রীয় বাহিনী শুধুমাত্র পুলিশকে সাহায্য করবে। ডিভিশন বেঞ্চ এ-ও জানায়, পুলিশ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করা হচ্ছে না। পুলিশ অদক্ষ বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে না, এমন কিছুই বলা হচ্ছে না। কিন্তু বড় কোনও ঘটনা ঘটে গেলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে।?
রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় হাই কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চে জানান, ৬ কোম্পানি বিএসএফ এবং এক হাজার পুলিশকর্মী এলাকায় মোতায়েন রয়েছেন। পুলিশের আইজি, ডিআইজি পদমর্যাদার আধিকারিকেরা এলাকায় রয়েছেন। তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। শুভেন্দুরা যে অভিযোগগুলি করছেন, তা অস্পষ্ট বলে দাবি রাজ্যের আইনজীবীর। কল্যাণের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মামলাটি করা হয়েছে। তিনি জানান, পুলিশ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই করছে।?