Rajeev Kumar Vs CBI

সারদা চিটফান্ড মামলায় ডিজি রাজীব কুমারকে স্বস্তি দিল সুপ্রিম কোর্ট, আগাম জামিন বহাল রাখল শীর্ষ আদালত, আট সপ্তাহ পরে ফের শুনানির সম্ভাবনা

ছ’বছর পরে গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টে রাজীবের মামলা আবার ওঠে। প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছিলেন, এত দিন পরে কেন এই মামলা নিয়ে আবার এল সিবিআই? এতো দিন ধরে সিবিআই কী করছিল বলেও প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি বিআর গবই।

রাজীব কুমারের আগাম জামিন বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট।
নিজস্ব সংবাদদাতা, দিল্লি
  • শেষ আপডেট:১৭ অক্টোবর ২০২৫ ০৩:৩৪

সারদা চিটফান্ড মামলায় রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে করা সিবিআইয়ের আবেদন বাতিল করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। ফলে আপাতত স্বস্তি পেলেন রাজীব। তাঁর আগাম জামিনই বহাল থাকছে। তবে রাজীবের বিরুদ্ধে যে আদালত অবমাননার মামলাটি বাতিল হয়নি। ওই মামলার উপরে তাঁর আগাম জামিনের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। আট সপ্তাহ পরে ফের এই মামলাটি শুনতে পারে শীর্ষ আদালত।

সারদাকাণ্ডে ছ’বছর আগে আইপিএস অফিসার রাজীবকে আগাম জামিন দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের ছ’বছরের পুরনো মামলাটি নিয়ে গত সোমবারই সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে। কিন্তু কেন্দ্রের সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন, এর সঙ্গে সিবিআই-তদন্তে বাধা দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলার শুনানি একসঙ্গে হোক। সেই মামলাও ছ’বছর ধরে ঝুলে রয়েছে। শুক্রবার তার শুনানি ছিল প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের বেঞ্চে। সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইয়ের আবেদন বাতিল করে দিয়েছে। রাজীবের আগাম জামিন বহাল রাখল দেশের শীর্ষ আদালত।

এ দিন রাজীবের মামলা নিয়ে সলিসিটর জেনারেল বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের অফিসারদের হেনস্থা করা হয়েছিল। এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মহিলা অফিসারদেরও ওই দিন ছাড়া হয়নি। আমি কারও নাম নিচ্ছি না। তবে মিস্টার রাজীব, তাঁকে সকলে বাঁচাতে চাইছেন। মুখ্যমন্ত্রী কী করেছিলেন, সকলেই জানে।’’ রাজীবের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দে-র বক্তব্য, ‘‘সিবিআই আগাম জামিন চেয়ে যে আবেদন করেছিল, তা বাতিল করে দিয়েছে আদালত। তবে আদালত অবমাননার বিষয়টি আট সপ্তাহ পরে শোনা হবে।’’

এই বিষয়ে রাজ্যের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এটা কেন্দ্র রাজনৈতিক কারণে করছে। ওরা চাইছে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করতে। এটা রাজনীতির বিষয় নয়। এই মামলা টিকবে কী করে? সারদাকাণ্ড তো আর্থিক তছরুপের মামলা। রাজীবের বিরুদ্ধে তো তেমন কোনও অভিযোগই নেই।“

সারদা চিটফান্ড মামলায় তদন্তের শুরুতে রাজ্য সরকারের গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছিল। সেই সিটের অন্যতম সদস্য ছিলেন বিধাননগরের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের কাছে। সিবিআই অভিযোগ করেছিল, রাজীব তদন্তে অসহযোগিতা করছেন। মামলা সংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং নথি ইচ্ছাকৃত ভাবে বিকৃত করেছেন। তবে সব অভিযোগ নস্যাৎ করে দেন রাজীব। 

আদালতে রাজীব জানান, তদন্তে সিবিআইকে তিনি পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন। সেই মামলায় মেঘালয়ের শিলংয়ে পাঁচ দিন ধরে মোট ৪০ ঘণ্টা রাজীবকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। পরে কলকাতার সিবিআইয়ের দফতরেও তিনি হাজিরা দিয়েছিলেন। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্ট রাজীবকে অন্তর্বর্তী রক্ষাকবচ দিয়েছিল। পরে তা আবার প্রত্যাহারও করা হয়। তবে শীর্ষ আদালত মামলাকারীকে জানায়, রাজীব চাইলে আগাম জামিনের আবেদন করতে পারেন। সেই মতো তিনি আগাম জামিন চেয়ে হাই কোর্টে মামলা করেন। 

২০১৯ সালের ১ অক্টোবর রাজীবের আগাম জামিনের আর্জি মঞ্জুর করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। তিন দিনের মধ্যে ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সিবিআই। সে বছর ২০ ডিসেম্বর শীর্ষ আদালতের নোটিস পান রাজীব। এর পরে এই মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কয়েকটি আবেদন জমা পড়ে আদালতে। যদিও শুনানির কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি।

ছ’বছর পরে গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টে রাজীবের মামলা আবার ওঠে। প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন তুলেছিলেন, এত দিন পরে কেন এই মামলা নিয়ে আবার এল সিবিআই? এতো দিন ধরে সিবিআই কী করছিল বলেও প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি বিআর গবই।


Share