Rajeev Kumar Vs CBI

‘ছ’বছর ধরে কী করছিল সিবিআই?’ রাজীব কুমারের মামলায় ‘বিস্ময়’ প্রকাশ সুপ্রিম কোর্টের, আগামী শুক্রবার ফের শুনবেন দেশের প্রধান বিচারপতি

রাজ্য সরকারের গঠন করা বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) প্রথম সারদা চিটফান্ডের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছিল। সেই দলের সদস্য ছিলেন বিধাননগরের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেই মামলাটির তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে।

আগামী শুক্রবার ফের শুনানির সম্ভাবনা।
নিজস্ব সংবাদদাতা, দিল্লি
  • শেষ আপডেট:১৪ অক্টোবর ২০২৫ ১২:১৮

সারদা চিটফান্ড মামলায় রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের জামিন খারিজ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। হাই কোর্ট জামিন দিয়েছিল রাজীবকে। শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, এত বছর ধরে কেন রাজীব কুমারকে একবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি?

সোমবার প্রধান বিচারপতি বিআর গবই এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চে ওই মামলাটি শুনানি হয়। এ দিন শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বিআর গবই সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “কেন গত ছ’বছরে সিবিআই রাজীব কুমারকে একবারও জিজ্ঞাসাবাদ করেনি?” গোটা ঘটনাপ্রবাহকে ‘শকিং (আশ্চর্যজনক)’ বলে পর্যবেক্ষণ করেন দেশের প্রধান বিচারপতি।

এ দিন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা পাল্টা আদালতে বলেন, “মামলার বিস্তারিত নথি দেখলে অবাক হতে হবে।”রাজীব কুমারের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব এ দিন আদালতের কাছে দাবি করেন, “দক্ষ আইপিএস অফিসারকে হেনস্থা করা হচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁর সম্মানহানি করা হচ্ছে।“ দু’পক্ষের সাওয়াল জবাব শোনার পরে সোমবার সুপ্রিম কোর্ট মনে করছে এই মামলার শুনানির প্রয়োজন রয়েছে। জানিয়েছে, আগামী শুক্রবার মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানি করবে সুপ্রিম কোর্ট। এর পাশাপাশি ওই দিনেই রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের দায়ের করা আদালত অবমাননার মামলারও শুনানি হবে।

উল্লেখ্য, রাজ্য সরকারের গঠন করা বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) প্রথম সারদা চিটফান্ডের ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছিল। সেই দলের সদস্য ছিলেন বিধাননগরের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেই মামলাটির তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। তদন্তে নেমে এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অভিযোগ তুলেছিল, রাজীব তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। যদিও সিবিআইয়ের যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছিলেন রাজীব। কিন্তু এর পরে এই পুলিশকর্তাকে হেফাজতে চেয়ে পদক্ষেপ করতে শুরু করে সিবিআই। 

এর পরে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে রাজীব কুমারকে অন্তর্বর্তী রক্ষাকবচও দিয়েছিল। যদিও সেই বছরেই মে মাসে তা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। আগাম জামিনের আর্জি জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন রাজীব কুমার। সেই সময় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লাহ মুন্সি এবং বিচারপতি শুভাশিস দাশগুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চ তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। পাশাপাশি রাজীবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তুলেও একটি মামলা করে তারা।

সেই মামলাটি ছ‘বছর পরে সুপ্রিম কোর্টে ওঠে। এ দিন প্রধান বিচারপতি বলেন, “ছয় বছর আগে আগাম জামিন দেওয়া হয়েছিল। তা রদ করা হয়নি। ছ’বছর পরে আমরা আগাম জামিন কী ভাবে বাতিল করব? এর মধ্যে আপনারা (সিবিআই) ওঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করেননি।” পাল্টা তুষার মেহতা বলেন, “শুধু আগাম জামিনের মামলা নয়। এর সঙ্গে আদালত অবমাননার মামলাও রয়েছে। একসঙ্গে দু’টি মামলার শুনানি করা হোক।” দু’টি মামলা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তা-ও আদালতে জানান সলিসিটর জেনারেল তুষার।

রাজীব কুমারের আইনজীবী পাল্টা আদালতে বলেন, “ছ’বছরে রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। এই মামলা করা হয়েছে হেনস্থা ও সম্মানহানির জন্য।” প্রধান বিচারপতি বলেন, “ছ’বছর ধরে এই মামলাটি পড়ে রয়েছে। আপনারা কোনও পদক্ষেপ নেননি এই সময়ে।” এই বিষয়টি অবাক করার মতো, উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি । যদিও পাল্টা তুষার মেহতা দাবি করেন, “তিনবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে রাজীব কুমারকে।”


Share