Police Injured

সালিশি সভায় কেন ‘হস্তক্ষেপ’ পুলিশের! পুলিশকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ তৃণমূল নেতার অনুগামীদের বিরুদ্ধে, রণক্ষেত্র হরিশচন্দ্রপুর

দু’জন পুলিশ আধিকারিক এবং তিনজন পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন। হরিশচন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।

রণক্ষেত্র মালদহের হরিশচন্দ্রপুর।
প্রশান্ত দাস, হরিশ্চন্দ্রপুর
  • শেষ আপডেট:২৬ আগস্ট ২০২৫ ০৮:১২

খানায় দায়ের হয়েছে অভিযোগ। কিন্তু অভিযুক্তকে ধরার আগেই গ্রামে তাঁকে নিয়ে বসে গিয়েছে সালিশি সভা। সালিশি সভায় দেওয়া হয়েছে অভিযুক্তকে দেওয়া হয়েছে মারধরের নিদান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে মিলল না ‘পরিত্রান’। উল্টে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। মার খেল পুলিশের আধিকারিক-সহ অন্যান্য কর্মীরা। এই নিয়ে রণক্ষেত্রের আকার ধারণ করে মালদহের হরিশচন্দ্রপুর। গোটা ঘটনায় রাজ্যের মন্ত্রী ও হরিশচন্দ্রপুরে তৃণমূল বিধায়ক তাজমুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ এক নেতার নাম জড়িয়ে।

একটা ইভটিজিং-এর অভিযোগ নিয়ে মালদহ জেলার হরিশচন্দ্রপুরের সুলতানপুরের ডাটিওন গ্রামে একটি সালিশি সভা বসে। অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার নাম জিয়াউল হক। স্থানীয় সূত্রে খবর, জিয়াউল রাজ‍্যের মন্ত্রী ও হরিশচন্দ্রপুরের তৃণমূল বিধায়ক তাজমুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ। তিনিই এই সভা ডেকেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। সভা চলাকালীন গ্রামের ‘বিচারক’-এর নির্দেশে অভিযুক্ত যুবককে মারধরের নিদান দেয়। শুরু হয় যুবককে বেধড়ক মারধর। 

খবর যায় থানায়। দেরি না করে গাড়ি নিয়ে কয়েক জন পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে পৌঁছোন। কিন্তু আক্রান্তকে উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশকর্মীরাই আক্রান্ত হলেন। অভিযোগ, তৃণমূল নেতা জিয়াউল হকের ‘নিদানে’ এলাকাবাসীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুরও চালানো হয়েছে।

জানা গিয়েছে, মাঠে গরু বাঁধছিলেন এক তরুণী। সেই সময় স্থানীয় এক যুবক এসে একটি কাগজে ফোন নম্বর লিখে দেয়। কিন্তু ওই কাগজ নিতে তরুণী অস্বীকার করলে অভিযুক্ত তরুণীর সঙ্গে ‘অশ্লীল ব‍্যবহার’ করে। এ নিয়ে হরিশচন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার আগেই গ্রামে তৃণমূল নেতার নেতৃত্বে সালিশি সভা বসে যায়। সেই সভায় তরুণীর পরিবারের লোকজনও ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

কিন্তু সালিশি সভার ‘বিচারকদের’ পুলিশি হস্তক্ষেপ পছন্দ হয়নি। ফলে অভিযুক্ত যুবককে উদ্ধার করতে গেলে আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। বাঁশ-লাঠি-পাথর নিয়ে পুলিশকর্মীদের ওপর চড়াও হয় সালিশি সভার ‘মাতব্বর’ এবং সদস্যেরা। ব‍্যাপক ভাঙচুর চালানো হয় পুলিশের গাড়ি। খবর পেয়ে আরও বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান হরিশচন্দ্রপুর থানার আইসি মনোজিৎ সরকার। ততক্ষণে গোটা এলাকা রনক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে। জানা গিয়েছে, দু’জন পুলিশ আধিকারিক এবং তিনজন পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন। হরিশচন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে তাঁদের চিকিৎসা চলছে। হেনস্থা করা হয়েছে আইসি মনোজিৎ সরকারকেও। ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

তরুণীর পরিবারের অভিযোগ, তৃণমূল নেতা জিয়াউল হকের নির্দেশে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। যদিও তৃণমূল নেতা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জিয়াউলের বক্তব্য, “সবাই মিথ্যা বলছে। আমি এ রকম কিছু করিনি।” রাজ্যের মন্ত্রী ও হরিশচন্দ্রপুরের তৃণমূল বিধায়ক তাজমুল হোসেন বলেন, “পুলিশের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা আছে। তাঁরাই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।”


Share