করোনা মহামারির সময়ে সিপিএম পরিচালিত কেরল সরকারের তথাকথিত 'কেরল মডেল' সারা দেশে প্রশংসিত হয়েছিল। কেরলের তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজার কর্মশৈলীকে অনেকেই আদর্শ বলে প্রচার করেছিল। কিন্তু এখন কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (CAG)-এর রিপোর্ট পিনারাই বিজয়ন সরকারের কোভিড ব্যবস্থাপনা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে, মহামারি চলাকালীন ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই কিট) কেনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অনিয়ম হয়েছিল এবং একটি নির্দিষ্ট বেসরকারি কোম্পানি তা থেকে লাভবান হয়েছে।?
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মার্চ মাসে রাজ্য সরকার কেরল মেডিকেল সার্ভিসেস কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমএসসিএল)কে পিপিই কিট এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনার জন্য বিশেষ অনুমতি দিয়েছিল। সেই সময় রাজ্য সরকারই পিপিই কিটের সর্বোচ্চ মূল্য প্রতি কিট ৫৪৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল যাতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তা সত্ত্বেও কেরলে প্রতিটি পিপিই কিট ১,৫৫০ টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। এই দর সরকারি দামের চেয়ে প্রায় ৩০০% বেশি ছিল।?
ক্যাগের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এই কেনাকাটার প্রক্রিয়ায় সান ফার্মা নামে একটি কোম্পানিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। এই কোম্পানিকে একশো শতাংশ অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল যদিও অন্য কোম্পানিগুলি এর চেয়ে কম দামে হাসপাতালে কিট সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছিল। ক্যাগ এই প্রক্রিয়াটিকে ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছে এবং বলেছে এর ফলে রাজ্যের উপর অতিরিক্ত ১০.২৩ কোটি টাকার আর্থিক বোঝা চেপেছে।?
রিপোর্ট অনুসারে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে করা উচ্চমূল্যের কেনাকাটা রাজ্যের সম্পদের উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করেছে। যেখানে কয়েক লক্ষ কিট কম দামে কেনা যেত সেখানে ১৫,০০০ কিট বেশি দামে কেনা হয়েছিল। এ ছাড়াও সে সময়ে রাজ্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের বিরাট ঘাটতি ছিল। কেরলে ডাক্তার এবং ওষুধের অভাব ছিল। ক্যাগের রিপোর্টে এ কথা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সস্তা দামে পিপিই কিট সরবরাহকারী সংস্থাগুলিকে কম অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। অন্য দিকে, দামি পিপিই কিট সরবরাহকারী সংস্থাগুলিকে অগ্রিম বেশি টাকা দেওয়া হয়েছিল এবং বড় মূল্যের অর্ডার দেওয়া হয়েছিল।?
এই রিপোর্ট প্রকাশের পরে বিরোধীরা ক্ষমতাসীন বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এলডিএফ) সরকারকে আক্রমণ করেছে। কংগ্রেস নেতা ভি ডি সতীশন সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, “মানুষের জীবন বাঁচানোর পরিবর্তে সরকার কোভিড মহামারিকে নিজেদের পকেট ভরার সুযোগ করে তুলেছে। এই দুর্নীতি মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন এবং প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে কে শৈলজার নির্দেশেই হয়েছিল।”?
এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় কে কে শৈলজা জানিয়েছেন, তিনি এখনও সিএজি রিপোর্টটি পড়েননি। তবে তাঁর দাবি, সেই সময়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করেই পিপিই কিট কেনা জরুরি ছিল। তিনি বলেন, “মহামারি চলাকালীন পিপিই কিটের বিশাল ঘাটতি ছিল। কিছু কিট বেশি দামে কিনতে হয়েছিল, কিন্তু লক্ষ লক্ষ কিট কম দামে কেনা হয়েছিল।” তিনি আরও দাবি করেন, যখন বিধানসভায় বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছিল তখন স্পষ্ট উত্তর দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, "মাত্র ১৫,০০০ কিট বেশি দামে কেনা হয়েছিল এবং তা সেই সময়ের পরিস্থিতির কারণে হয়েছিল। বিরোধীরা বারবার এই বিষয়টি তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।”?
ক্যাগের রিপোর্টে রাজ্যের কোভিড ব্যবস্থাপনার সময় আর্থিক অপব্যবহারের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে এবং এটিকে 'অপ্রয়োজনীয় ব্যয়' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ক্রয়ের সময় স্বচ্ছতার অভাব ছিল এবং কিছু কোম্পানি অন্যায়ভাবে তা থেকে লাভবান হয়েছে।?
ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার জানিয়েছে, তারা সিএজি রিপোর্টের বিস্তারিত জবাব দেবে। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, "প্রতিবেদনটি বিস্তারিতভাবে অধ্যয়ন করা হবে। প্রয়োজনে সরকার উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া জানাবে।" একই সঙ্গে বিরোধীরাও বিষয়টি নিয়ে আন্দোলন করার পরিকল্পনা করেছে। পাশপাশি ফের বিধানসভায় উত্থাপন করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। তবে ক্যাগের রিপোর্ট সিপিএম পরিচালিত কেরল সরকারের কোভিড ব্যবস্থাপনা নিয়েই প্রশ্ন তোলেনি, বরং মহামারির সময়ে রাজ্য সরকার বিভিন্ন গোষ্ঠীর থেকে যে প্রশংসা ও পুরষ্কার পেয়েছিল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।?
Share