Maoist Leader Mallojula Quits Party

মাওবাদীদের সশস্ত্র সংগ্রাম বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়ে পদত্যাগ করলেন কিষেণজির ভাই মাল্লুজোলা ভেনুগোপাল

তিনি প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন মাওবাদীরা যে পথ অনুসরণ করেছিল তা ‘সম্পূর্ণ ভুল’ ছিল এবং এর পতন রোধ করতে নিজের অক্ষমতার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, বারবার নেতৃত্বের ভুল মাওবাদীদের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে এনেছে। পাশাপাশি তিনি সংগঠনের কর্মীদের ‘অর্থহীন ত্যাগ’ করার পরিবর্তে ‘নিজেদের বাঁচাতে’ আহ্বান জানিয়েছেন।

মাল্লুজোলা ভেনুগোপাল রাও ওরফে অভয়।
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা
  • শেষ আপডেট:০৮ অক্টোবর ২০২৫ ০৩:৫৪

মাওবাদী জঙ্গি সংগঠন ছেড়ে মূলস্রোতে ফিরছেন মাল্লুজোলা ভেনুগোপাল রাও ওরফে অভয় ওরফে ভূপতি ওরফে সোনু। তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)-র পলিটবু‍্যরোর সদস্য এবং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রাক্তন পলিটবু‍্যরোর সদস‍্য কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেনজির ভাই। 
গত ৭ অক্টোবর তিনি সংগঠনের সদস্যদের কাছে সশস্ত্র সংগ্রাম বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে চিঠির মাধ্যমে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাধারণ সম্পাদক নিম্বালা কেশবরাও ওরফে বাসবরাজুর মৃত্যুর পরে সংগঠনের কর্তৃত্ব নিয়ে ভেনুগোপাল এবং হিদমার মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। গত ২১ মে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে বাসবরাজু ছাড়াও মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটির আট জন নেতা নিহত হন। তারপরেই দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদ আরও তীব্র হয়। মাওবাদীরা কার্যত তেলেঙ্গানা এবং ছত্তিসগঢ় লবিতে ভাগ হয়ে যায়।
মাওবাদীদের ১৫ জন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যের মধ‍্যে ১০ জনই তেলেঙ্গানার। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হতে চাইলেও ভেনুগোপালের প্রতি অনেকই সমর্থন করেননি। হিদমা গোষ্ঠীর সমর্থন রয়েছে থিপ্পিরি তিরুপতি ওরফে দেবুজির দিকে। আর তাতেই বিরক্ত হয়ে সংগঠন ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভেনুগোপাল। 
এর আগে গত অগস্ট মাসে চিঠি দিয়ে মাওবাদী নেতা-কর্মীদের কাছে সশস্ত্র সংগ্রাম ছেড়ে আত্মসমর্পণের আবেদন জানিয়েছিলেন ভেনুগোপাল। কিন্তু তা নিয়ে সংগঠনের ভিতরে কোনও আলোচনা করতে চাননি হিদমা গোষ্ঠীর সদস্যরা। 
যদিও সংগঠনের নেতৃত্বের মধ্যে কোনও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করেননি, তবুও তিনি প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন মাওবাদীরা যে পথ অনুসরণ করেছিল তা ‘সম্পূর্ণ ভুল’ ছিল এবং এর পতন রোধ করতে নিজের অক্ষমতার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, বারবার নেতৃত্বের ভুল মাওবাদীদের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে এনেছে। পাশাপাশি তিনি সংগঠনের কর্মীদের ‘অর্থহীন ত্যাগ’ করার পরিবর্তে ‘নিজেদের বাঁচাতে’ আহ্বান জানিয়েছেন। 
গত ২১ মে বস্তারের জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যায় মাওবাদী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাসবরাজু। ওই সংঘর্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির কমান্ডার সমেত আরও ২৮ জন মারা গিয়েছিল। তারপর থেকেই সংগঠনের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চাড়া দেয়। আত্মসমর্পণ এবং সশস্ত্র সংঘর্ষ বন্ধ করার জন‍্য দলীয় কর্মীদের বোঝাতে শুরু করেন ভেনুগোপাল রাও। 
ইতিমধ্যেই ভেনুগোপালের চিঠির সমর্থনে এগিয়ে এসেছে মাওবাদীদের গডচিড়ৌলি ডিভিশন এবং উত্তর বস্তার ডিভিশনাল কমিটি। গত ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর তারা চিঠি দিয়ে দলের পলিটব‍্যুরো সদস্য কমরেড সোনুর মতের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে। গত ৪ অক্টোবর কমরেড সোনুর সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে মাড ডিভিশনাল কমিটি। কমিটি সম্পাদক রণিতা অস্ত্র ছেড়ে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।২০১১ সালে কিষেনজির মৃত্যুর পর থেকে কিছুটা চাপে ছিলেন ভেনুগোপাল। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁর স্ত্রী তারা মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবীসের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।  
গত সেপ্টেম্বর মাসে আত্মসমর্পণ করেন কিষেনজির স্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পোথুলা পদ্মাবতী ওরফে কল্পনা ওরফে সুজাতা। ৬২ বছর বয়সী সুজাতার মাথার দাম ছিল ২৫ লক্ষ টাকা। সেই টাকা তেলেঙ্গানা পুলিশ তাঁর চিকিৎসার জন্য পদ্মাবতীর হাতেই তুলে দিয়েছে। প্রায় ৪৩ বছর ধরে তিনি আত্মগোপনে করে ছিলেন। 


Share