Sports Official Assault by TMC Leader

খেলার মাঠে তৃণমূল নেতার দাদাগিরি, আদিবাসী রেফারির পেটে লাথি মারার অভিযোগ মেদিনীপুরে, ভিডিয়ো ভাইরাল

অভিযুক্ত রাজা খাঁ মেদিনীপুর পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমিত্র খাঁয়ের ভাইপো। ওই দিন খেলার শেষে স্থানীয় বিধায়ক দীনেন রায়ের সঙ্গে ছবিও তুলেছেন।

আদিবাসী রেফারির পেটে সজোরে লাথি তৃণমূল নেতার।
নিজস্ব সংবাদদাতা: খড়্গপুর
  • শেষ আপডেট:১৬ আগস্ট ২০২৫ ০৩:১৭

একদিকে রাজ্যজুড়ে যখন ‘খেলা দিবস’ পালন করছে রাজ্য সরকার ঠিক সেই সময় খেলার মাঠে তৃণমূল কর্মীর দাদাগিরির ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে। মেদিনীপুর শহরে ঘটনাটি ঘটেছে। অভিযুক্ত স্থানীয় তৃণমূল নেতা রাজা খাঁ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আদিবাসী সম্প্রদায়ের রেফারির পেটে লাথি মেরেছেন। বিজেপির পাশাপাশি তৃণমূলও ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

রাজা খাঁ মেদিনীপুর পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমিত্র খাঁয়ের ভাইপো। ওই দিন খেলার শেষে স্থানীয় বিধায়ক দীনেন রায়ের সঙ্গে ছবিও তুলেছেন। জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর শহরের একটি স্কুলের মাঠে স্বাধীনতা দিবসের সন্ধ্যায় ফুটবল প্রতিযোগিতা চলছিল। খেলায় রেফারির ভূমিকায় ছিলেন লক্ষণ মান্ডি। তিনি খড়্গপুর সাব-ডিভিশনের রেফারি এসোসিয়েশনের সদস্য, পেশায় স্কুলের শিক্ষক। স্থানীয়দের দাবি, খেলার মাঝে বিপক্ষের গোল নিয়ে গোলমাল বাধে। রেফারি সিদ্ধান্ত মন মত না হওয়ায় খেলার মাঠে ঢুকে পড়েন রাজা। রেফারির দিকে আঙুল উঁচিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। মাঠে থাকা অন‍্যান‍্যরা বাধা দিলে তাদেরকেও মারধর করেন। এর পরেই রেফারির পেটে সজোরে লাথি মারেন। অভিযোগ, হম্বিতম্বি করে সেই গোলও বাতিল করান। রাজার বাবা হিমাদ্রি খাঁ তৃণমূলের জেলার সহ-সভাপতি।

তৃণমূল নেতার দাদাগিরির ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন রাজ‍্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বিরোধী দলনেতা বলেছেন, “রেফারিকে কুরুচিকর আক্রমণ তৃণমূলের সংস্কৃতি। তা ভোটের ময়দানে রেফারির ভূমিকায় থাকা জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণই হোক বা স্থানীয় ফুটবল প্রতিযোগিতায় এই পুঁচকেপাঁচকা তৃণমূলী রাজা খান হোক।’’ শুভেন্দু জানান, ওই রেফারি তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। তফসিলি জাতি ও উপজাতি (অত‍্যাচার প্রতিরোধ) এবং ভারতীয় ন্যায় সংহিতার উপযুক্ত ধারায় মামলা করে আইনি পদক্ষেপ করতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের সুপারকে অনুরোধ জানান তিনি।

তৃণমূল নেতার এহেন আচরণের নিন্দা করেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “ নিন্দনীয় ঘটনা। কোনও ভাবেই সমর্থন করা যায় না। কিন্তু তৃণমূল নেতার ভাইপো বলে তাঁর দায় কেন তৃণমূলকে নিতে হবে? ইনদওরে কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের ছেলে আকাশ বিজয়বর্গীয় ব্যাট দিয়ে সরকারি আধিকারিককে পিটিয়েছিল। বিজেপির কেউ নিন্দাও করেনি। ওদের মুখে জ্ঞানের বাণী শুনব না। বাংলায় আইনের শাসন আছে। ব্যবস্থা হবে।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় বলেন, ‘‘মাঠে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। রাজা খানের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। দলের কোনও কর্মসূচিতেও তিনি থাকেন না।’’ শনিবার মেদিনীপুর পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি খেলার মাঠের ধারেকাছে যাইনি। এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। সকালে ঘটনার ভিডিয়ো আমি দেখেছি। এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। যে এই কাজ করেছে, অবিলম্বে তাঁর রেফারির কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া উচিত। সম্পর্কে সে আমার ভাইপো হতে পারে। কিন্তু অন্যায় করে কেউ ছাড় পাবে না।’’

পশ্চিমবঙ্গ রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা চিত্তদাস মজুমদারের কথায়, ‘‘যে কোনও স্তরের খেলাতেই রেফারিকে মারা গর্হিত অপরাধ। খেলার বাইরে থেকে ঢুকে রেফারিকে আক্রমণ সমর্থন করা যায় না।’’


Share