High Court

দুর্ঘটনার মামলা বদলে গেল খুনের মামলায়! খেজুরির ঘটনায় হাই কোর্টের প্রশ্নের মুখে রাজ্য সরকার

গত ১১ জুলাই মহরম উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় খেজুরি থানার ভাঙনমারি গ্রামে। পরের দিন সকালে অনুষ্ঠানস্থলের অদূরে দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়।

কলকাতা হাই কোর্টের প্রশ্নের মুখে রাজ্য সরকার।
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা
  • শেষ আপডেট:২১ আগস্ট ২০২৫ ০৬:৩৭

খেজুরির ঘটনায় একই দেহের দু’বার ময়নাতদন্ত। জেলার হাসপাতালে এক রিপোর্ট, কলকাতার হাসপাতালে এক রকম রিপোর্ট। কী করে সম্ভব? পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির জেড়া মৃত্যুর দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বিস্মিত কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের মন্তব্য, “এই মামলা নিয়ে আমি খুবই বিরক্ত”। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বিদ‍্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় রিপোর্টে দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।”

গত জুলাই মাসের ১১ তারিখ পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির ভাঙনমারি গ্রামে মহরমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পরের দিন সকালে অনুষ্ঠানস্থলের অদূরে জোড়া মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মৃতদের নাম সুধীর পাইক এবং সুজিত দাস। পরিবারের অভিযোগ, তাদের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ছিল। কিন্তু আয়োজকেরা দাবি করে, তারা বিদ‍্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে। একই দাবি ছিল শাসকদল তৃণমূলেরও। বিজেপি অভিযোগ, দুই যুবককে ধর্মীয় কারণে খুন করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে ১৩ জুলাই খেজুরি বনধের ডাক দেওয়া হয়েছিল। কয়েকটি হিন্দুদের ধর্মীয় সংগঠন বিচারের দাবিতে মিছিলও করেছিল। সেই মিছিলে নেতৃত্ব দেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

পরবর্তীতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে পুলিশ জানায়, তাদের বিদ‍্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের দাবি মানতে রাজি হয়নি মৃতদের পরিবার। তারা দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের জন্য কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। তবে সেই মামলায় খারিজ করে চিকিৎসকের বক্তব্য রেকর্ড করার দেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের একক বেঞ্চ। একক বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চ দ্বারস্থ হন। ডিভিশন বেঞ্চ সেই আর্জি মেনে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি জানানো হয়, এই মামলা বিচারপতি ঘোষের এজলাসে শুনানির হবে।

হাই কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী দুই দেহের ময়নাতদন্ত করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। গতকাল মঙ্গলবার সেই রিপোর্ট দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। বিচারপতির প্রশ্ন, “কীভাবে পূর্ব মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত মেডিকেল কলেজ এবং এসএসকেএম হাসপাতালের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ভিন্ন হয়?”। বিচারপতি বলেন, “তবে কি জেলাগুলির ময়নাতদন্তের রিপোর্টে পার্থক্য আছে?” তিনি আরও বলেন, “মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের রিপোর্টের সঙ্গে এসএসকেএমের রিপোর্টে পার্থক্য রয়েছে। এরম কেন হবে? দূরবর্তী জেলার ক্ষেত্রে এরম জিনিস দেখা যাচ্ছে।”

এ দিন জেলার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, “জেলার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের স্থানীয় ব‍্যক্তিদের ওপর নির্ভর হতে হচ্ছে?” বিচারপতি মনে করছেন, জেলার কোনও ঘটনার তদন্তের ক্ষেত্রে কোথাও একটা পুলিশের গাফিলতি রয়েছে। রাজ‍্যের উদ্দেশ্যে বিচারপতি বলেন, “আগেআপনারা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছে ধরে নিয়ে তদন্ত করছিলেন। এখন তো খুনের ধারায় মামলা হবে! পুরো তদন্তেরগতিপথ পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক এবং তদন্তকারী আধিকারিকদের ভূমিকা এখনপ্রশ্নের মুখে। প্রয়োজনে পদক্ষেপ করতে হবে।” তিনি এই ঘটনার তদন্তে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নিযুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।


Share