শিলিগুড়িতে একদিকে জলসংকট, অন্যদিকে জল চুরি। জলের অপচয়ও কম হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে শিলিগুড়ির অন্যতম বড় সমস্যা পানীয় জল নিয়ে আরও সতর্ক হচ্ছে শিলিগুড়ি পুরনিগম। জল এলেই পাম্প চালিয়ে সেই জল বাড়ির রিজার্ভারে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপের কথা জানালেন স্বয়ং মেয়র গৌতম দেব। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘এভাবে পানীয় জল চুরি রুখতে টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হচ্ছে। এই টাস্ক ফোর্স বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে বিষয়টি নিয়ে নজরদারি চালাবে। কেউ এভাবে জল চুরি করছে ধরা পড়লেই জরিমানা করা হবে।' এমনকি সেই বাড়ির পানীয় জলের সংযোগও কেটে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মেয়র। যদিও শিলিগুড়ির ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যেভাবে পানীয় জলের অপচয় এবং চুরি হচ্ছে, তাতে মেয়রের এই নিদান কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন থাকছেই।?
শিলিগুড়ি শহরে পানীয় জল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা চলছে। ১৯৯৪ সালে তৈরি ফুলবাড়ির পানীয় জলপ্রকল্প থেকে যে পরিমাণ জল আসে, তা শহরের বর্তমান চাহিদার তুলনায় অনেকটাই কম। তার ওপরে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন কারণে পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে জল নিয়ে উৎকণ্ঠা ও ভোগান্তিকে সম্বল করেই দিন পার করছেন শিলিগুড়ির বাসিন্দারা। এরই মধ্যে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল চুরির অভিযোগ সামনে আসছে। কোথাও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের পাইপলাইন কেটে সেখান থেকে নিজস্ব পাইপ লাগিয়ে তার সঙ্গে টুলু পাম্প যোগ করে দেওয়া হচ্ছে। দু'বেলা জল এলেই সেই পাম্পের সাহায্যে জল নিজের বাড়ির রিজার্ভারে ভরে নিচ্ছেন কিছু মানুষ। সরাসরি পাইপলাইনের সঙ্গে পাম্পসেট বসিয়ে জল টেনে নেওয়ায় আশপাশের এলাকায় জলের ফোর্স অনেকটা কমে যাচ্ছে। ফলে সেই এলাকার মানুষ পর্যাপ্ত জল পাচ্ছেন না। এর আগেও বিক্ষিপ্তভাবে পুরনিগম দু'তিনবার এভাবে জল চুরির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখনও শহরজুড়ে দেদারে জল চুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ।?
এর পাশাপাশি ৪৭টি ওয়ার্ডেই পানীয় জলের স্ট্যান্ডপোস্টগুলিতে বিবকক না থাকায় প্রতিদিন প্রচুর জল অপচয় হচ্ছে। পুরনিগমের বক্তব্য, ‘নিয়মিত প্রতিটি স্ট্যান্ডপোস্টে বিবকক লাগানো হয়। কিন্তু সেগুলি চুরি হয়ে যাচ্ছে, অথবা ভেঙে ফেলা হচ্ছে।'?
শনিবার টক টু মেয়রে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে মানুষ ফোন করেছেন। কেউ আবার পুরনিগমের সরবরাহ করা পাইপলাইনের সঙ্গে পাম্প বসিয়ে জল তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। তারপরেই মেয়র জানান, ‘আমরা জল চুরি রুখতে টাস্ক ফোর্স তৈরি করছি। বরোভিত্তিক এই টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হবে। পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থার ওপরে নিয়মিত নজরদারি চালানো হবে। জল চুরির অভিযোগ পেলে দ্রুত সেখানে পৌঁছে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে বা যাঁরা এ ভাবে টুলু পাম্প বসিয়ে পুরনিগমের সরবরাহ করা জল টেনে নিচ্ছেন, তাঁদের বাড়ির জলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। আর কোনওদিন তাঁরা জলের সংযোগ পাবেন না।'?