Political Crisis in Nepal

নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ আন্দোলনকারীদের, বাড়িতে আটকে পড়ে ঝলসে মৃত্যু হল স্ত্রীর

গণবিদ্রোহে চাপে পড়ে ইস্তফা দিয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। তাঁর বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও একাধিক প্রাক্তন এবং বর্তমান মন্ত্রীদের মারধর এবং বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ওলি দুবাইয়ে চলে যেতে পারেন বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানালের স্ত্রী রাজলক্ষ্মী চিত্রকর মৃত।
নিজস্ব সংবাদদাতা, কাঠমান্ডু
কাঠমান্ডু
  • শেষ আপডেট:০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:১৪

অগ্নিগর্ভ নেপাল। নেপালের প্রধানমন্ত্রী ও কমিউনিস্ট নেতা ঝালানাথ খানালারের বাসভবনে এ বার অগ্নিসংযোগ করল আন্দোলনকারীরা। নেপালের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, সেই সময় ঝালানাথ খানালের স্ত্রী রাজলক্ষ্মী চিত্রকর বাড়িতেই ছিলেন। আন্দোলনকারীদের লাগানো আগুনে বাড়িতেই আটকে পড়ে ঝলসে মৃত্যু হয়েছে।

নেপালে গণবিদ্রহের জেরে সেনাবাহিনীর পরামর্শে ইস্তফা দিয়েছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও কমিউনিস্ট নেতা কেপি শর্মা ওলি। তাঁর বেক্তিগত আবাসনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এর পরে একের পর এক প্রাক্তন এবং বর্তমান একাধিক মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক তথা দেশের অর্থমন্ত্রী বিষ্ণুপ্রসাদ পৌডলকে রাস্তায় তাড়া করে আন্দোলনকারীরা। তার পরে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করে জনতা।

আন্দোলনকারীদের রোষানল থেকে রেহাই পেল না নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঝালানাথ খানাল ও তাঁর পরিবার। মঙ্গলবার কাঠমান্ডুর ডাল্লু এলাকার ঝালানাথের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে হয়। নেপালের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, সেই সময় তাঁর স্ত্রী রাজলক্ষ্মী চিত্রকর বাড়িতেই ছিলেন। কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম এ-ও জানিয়েছে, বাড়িতে জোর করে রাজলক্ষ্মী আটকে রেখে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, পরে রাজলক্ষ্মীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করা কীর্তিপুর বার্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। তবে ঝালানাথের পারিবারিক সুত্র উল্লেখ করে নেপালের সংবাদমাধ্যম রাজলক্ষ্মীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। 

ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে একটি রাজলক্ষ্মীর ঝলসানো দেহের ছবি ভাইরাল হয়েছে। যদিও এখন কলকাতা এই ছবির সত্যতা যাচাই করেনি। প্রসঙ্গত, ঝালানাথ খানাল নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিএন) সদস্য। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি নেপালের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। পদে ছিলেন অগস্ট মাস পর্যন্ত।

বেশ কিছু দিন আগে সমাজমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নেপাল সরকার। এর পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে সেই দেশের ছাত্র-যুবরা। শুরু হয় গণবিদ্রোহ। সোমবার সেই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়। নির্বিচারে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায় কমিউনিস্ট সরকারের পুলিশ। মৃত্যু হয় ১৯ জন আন্দোলনকারীর। চাপে পড়ে কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন নেপালের কমিউনিস্ট সরকার নিষেধাজ্ঞা তুলতে বাধ্য হয়। তাতেও থামেনি বিক্ষোভের আগুন। মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়। ওঠে কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের দাবি। পরে সেনাবাহিনীর পরামর্শে পদত্যাগ করেন ওলি। মনে করা হচ্ছে, কেপি শর্মা ওলি দেশ ছেড়ে চলে যাবেন। দুবাইয়ে যেতে পারেন বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর।ওলির পদত্যাগের পরে ইস্তফা দিয়েছেন নেপালের রাষ্ট্রপতিও।

আজ, মঙ্গলবার সকাল থেকে নেপালের কমিউনিস্ট সরকারের মন্ত্রী এবং প্রাক্তন মন্ত্রীদেরকে আন্দোলনকারীদের রোষানলে পড়তে হয়। নেপালের আরও এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা এবং তাঁর স্ত্রীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। সেই ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে।

নেপালের প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেলের বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অপর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা সিপিএন নেতা প্রচণ্ডের বাসভবনেও আগুন ধরিয়ে দিয়েছে উত্তেজিত জনতা। এ ছাড়া সদ্য ইস্তফা দেওয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী পৃথ্বী সুব্বা গুরুংয়ের বাসভবনেও আগুন ধরানো হয়েছে। এ ছাড়া ইউএমএল নেতা মহেশ বাসনেত্র বাড়িতেও আগুন ধরানো হয়েছে।


Share