Purulia Agitation

পুরুলিয়ায় যুবককে রহস্যমৃত্যুকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার, মদের দোকানের সামনে মিলল দেহ, পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে জখম পুলিশকর্মী

বিলেতি মদের দোকানের সামনে এক যুবকের দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়াল পুরুলিয়ার সাঁওতালডিহিতে। অভিযোগ, তাঁকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। মৃত সুরেশ বাউরির দেহ তোলা নিয়ে পাঁচশোরও বেশি মানুষ বিক্ষোভ দেখালে পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ।

প্রতীকী চিত্র।
নিজস্ব সংবাদদাতা, পুরুলিয়া
  • শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০১:৫০

বিলেতি মদের দোকানের সামনে থেকে উদ্ধার হল যুবকের দেহ। রবিবার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল পুরুলিয়ার সাঁওতালডিহি। পরিবারের অভিযোগ, তাঁকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। ঘটনায় স্থানীয়দের ক্ষোভ উগরে পড়ে। পাঁচশোরও বেশি মানুষ মদের দোকান ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পুলিশ দেহ উদ্ধার করতে গেলে তাঁরা বাধা দেওয়া হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে সাঁওতালডিহি থানার পুলিশ লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হন। তবে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ লাঠিচার্জের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাঁদের দাবি, বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে কয়েক জন পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন।

মৃতের নাম সুরেশ বাউরি (৩৭)। বাড়ি সাঁওতালডিহি থানার বগড়া এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুক্রবার সকালে কাঁকী বাইপাস রোডের ধারের লাইসেন্সপ্রাপ্ত মদের দোকানের সামনে তাঁকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন কয়েক জন। মদের দোকানের সামনে দ্রুত ভিড় জমতে শুরু করে। ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এর পর দোকান ঘিরে চলতে থাকে তুমুল বিক্ষোভ। তাঁদের দাবি, মদের দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে দেহ তুলতে দেওয়া হবে না। পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে। তবে দীর্ঘক্ষণ আলোচনার পরও কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। উল্টে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।

বিক্ষোভ চরমে উঠতেই রঘুনাথপুর এসডিপিও রাহেদ শেখের নেতৃত্বে পাড়া থানার বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে আসে। আবগারি দপ্তরের আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা ব্যর্থ হতেই পুলিশ লাঠিচার্জ করে করে বলে অভিযোগ। তাতে বিক্ষোভকারীদের পিছু হটতে বাধ্য করা হয়। এর পরেই দেহ তোলা শুরু হতেই পরিস্থিতি ফের অগ্নিগর্ভ হয়। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর এবং ইট-পাটকেল ছোঁড়ার ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী জখম হন। শেষ পর্যন্ত দেহ উদ্ধার করে পাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ওই মদ দোকানের জন্য প্রতি বছর এলাকায় মৃত্যু ঘটছে। প্রতিটা সংসারে অশান্তি চরমে উঠেছে। যুব সম্প্রদায় নেশাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই দোকানটি বন্ধের দাবিতে এলাকার বুদ্ধিজীবী ও মহিলারা একাধিকবার আন্দোলন করেছে। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টে আন্দোলনকারীদের মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। 

গ্রামবাসীদের দাবি, বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী সুরেশের বাবা এই মুহূর্তে বর্ধমানে কর্মরত। কয়েক বছর হল সুরেশের বিয়ে হয়েছিল। তাঁর একটি কন্যাসন্তানও রয়েছে। নিহতের বাবা চৈতো বাউরির অভিযোগ, মদের দোকানের ভিতরেই ছেলেকে মারধর করা হয়। পরে বাইরে টেনে এনে ফেলে দেওয়া হয়। তাঁর দাবি, নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল সুরেশের। মোবাইলটিও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁর মতে, দোকানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ্যে আনলেই ঘটনা স্পষ্ট হবে।

পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, লাঠিচার্জের অভিযোগ সঠিক নয়। উল্টে বিক্ষোভকারীরাই প্রথমে ইট-পাথর ছুঁড়েছিলেন। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে মৃতদেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। রিপোর্ট হাতে এলেই মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের এক আধিকারিক।


Share