Mamata Challenges Centre

কেন্দ্রের শর্তের কাগজ মঞ্চে ছিঁড়ে ফেললেন মমতা, ঘোষণা ‘একশো দিনের কাজ বাংলা নিজেই করবে’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোচবিহারে কেন্দ্রকে তোপ দাগলেন, একশো দিনের কাজের শর্ত নাকচ করে বললেন, “বাংলা নিজের তহবিল ও কর্মশ্রী প্রকল্পে এই কাজ করবে, কেন্দ্রের ভিক্ষায় নয়, নিজস্ব সক্ষমতায় এগোবে।”

সরকারি ‘নোট’ ছিঁড়লেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিজস্ব সংবাদদাতা, কোচবিহার
  • শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:৫১

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও একশো দিনের কাজ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন। কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে তিনি জানান, হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের এক বছর পেরিয়ে গেলেও কেন্দ্র তাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টে রাজ্যের উপর নানা শর্ত চাপিয়েছে। কয়েক দিন আগে কেন্দ্র থেকে পাওয়া সেই চিঠির অংশ তিনি সভায় উল্লেখ করেন এবং সেই নথিটিকেই মঞ্চে ছিঁড়ে ফেলে জানান, এই শর্ত রাজ্য মানবে না। তাঁর স্পষ্ট ঘোষণা, একশো দিনের কাজ বাংলা নিজেই করবে।

সভায় শুরু থেকেই মমতা বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুর চড়ান। তিনি দাবি করেন, চার বছর ধরে একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রাখা হয়েছে, আবাস যোজনা থমকে আছে, গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে তিনি আদালতের নির্দেশের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, কেন্দ্র তা মানছে না।

একশো দিনের প্রকল্পে ২০২১ সালের পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্য সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ‘কর্মশ্রী’ নামে বিকল্প প্রকল্প চালু করে। সেই প্রকল্পে নির্দিষ্ট দিনের কাজ দেওয়া হয় শ্রমিকদের। কর্মশ্রীর সাফল্য উল্লেখ করে মমতা জানান, বাংলার মানুষ ভিক্ষা চায় না; রাজ্য নিজেই নিজেদের পথ তৈরি করতে সক্ষম।

কেন্দ্রের শর্ত প্রসঙ্গে মমতা বলেন, শ্রম দফতরকে ত্রৈমাসিক শ্রম বাজেট দেখাতে বলা হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয় বলে তিনি অভিযোগ তোলেন। ডিসেম্বর মাসে এই দাবি তোলা এবং অচিরেই নির্বাচনী বিধি জারি হওয়ার সম্ভাবনা—এই দুই বিষয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজেট দেওয়ার সময়ই নেই। কেন্দ্রের আরও একটি শর্ত, একটি গ্রামসভায় মাত্র ১০ জনকে কাজ দেওয়া হবে এটিকে তিনি অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেন। তাঁর বক্তব্য, একটি দরিদ্র পরিবারের সদস্য সংখ্যাই কখনও কখনও ১০ জন হয়, সেখানে পুরো গ্রামসভায় এমন সীমাবদ্ধতা মানা অসম্ভব।

এ ছাড়াও একশো দিনের কাজে প্রশিক্ষণের বাধ্যবাধকতার কথাও তিনি তুলে ধরেন। মমতার অভিযোগ, কেন্দ্র বলছে প্রশিক্ষণ না থাকলে মাঠে নেমে কাজ করা যাবে না। এই সব শর্তকে তিনি ‘অমূলক’ এবং ‘মূল্যহীন’ বলে মন্তব্য করেন। নিজের হাতে ধরা কাগজ দেখিয়ে তিনি বলেন, এটি তাঁর নোট, কেন্দ্রের কোনও সরকারি আদেশ নয়। তিনি তা ছিঁড়ে ফেলে জানান, এই নথি রাজ্যের প্রতি অপমানের সমান।

সভা শেষে মমতা পরিষ্কার করে দেন, আবার ক্ষমতায় এলে রাজ্য কর্মশ্রীকে আরও বিস্তৃত করবে এবং একশো দিনের কাজও বাংলাই করবে। তিনি ঘোষণা করেন, কেন্দ্রের ভিক্ষায় নয়, বাংলা নিজের সক্ষমতায় এগোবে।


Share