Husband cannot deny social responsibilities just because wife earns something

স্ত্রী কিছু আয় করলেই স্বামী সামাজিক দায়িত্ব-কর্তব্য অস্বীকার করতে পারেন না, খোরপোশ মামলায় পর্যবেক্ষণ কলকাতা হাই কোর্টের

আদালত জানিয়েছে, সিআরপিসি ১২৫ অনুযায়ী একজন স্ত্রী, তাঁর স্বামীর মতই বা বলা যায় একইমানের জীবনযাপনের দাবি করতে পারেন। বেকার যুবক কিছু করে না-বলে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারে না। ওই যুবকের মনে রাখা উচিত, স্ত্রীকে কার্যত রাস্তায় বের করে দেওয়া হয়েছে৷ এখন স্ত্রী কিছু রোজগার করেন বলে স্ত্রীর প্রতি যে সামাজিক দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে, তা তিনি অস্বীকার করতে পারেন না।

নিজস্ব চিত্র।
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা
  • শেষ আপডেট:২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:১৯

স্ত্রী সামান্য আয় করলেও তিনি তাঁর খোরপোশ বা ভরণপোষণের খরচের জন্য অর্থ দাবি করতে পারবেন৷ খোরপোশের দাবি সংক্রান্ত একটি মামলায় এমনই পর্যবেক্ষণ দিল কলকাতা হাইকোর্ট৷ বিচারপতি অজয় মুখোপাধ্যায় রায় দিয়েছেন, সিআরপিসি ১২৫ অনুযায়ী একজন স্ত্রী, তাঁর স্বামীর মতই বা বলা যায় একইমানের জীবনযাপনের দাবি করতে পারেন। 

স্ত্রী সামান্য আয় করছেন বলেই খোরপোশের দাবি জানাতে পারবেন না, তা ঠিক নয়। বিশেষত স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন যেখানে আর্থিকভাবে স্ত্রী'র বাপের বাড়ির লোকজনের থেকে উন্নত, সেখানে স্ত্রী সেই দাবি করতেই পারেন বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, পানাগড়ের বাসিন্দা এক মহিলার মামলার শুনানির সময়ে বিচারপতি এমনটাই জানান। ১৯৫৪ সালের বিশেষ বিবাহ আইনে কলকাতার তালতলার বাসিন্দার সঙ্গে ওই মহিলার বিয়ে হয় ২০১২ সালের ৪ অগস্ট। রেজিস্ট্রি হওয়ার পরে দু'জনেই নিজেদের বাড়িতে ফিরে যান৷ এরপর একাধিকবার দু'জনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়েছেন এবং একে অপরের বাড়িতে কিছুদিন করে থেকেছেন৷ 

কিন্তু শেষপর্যন্ত দুজনের সেই অর্থে ঘরসংসার করা হয়নি। কারণ নিজেদের মধ্যে বনিবনা হয়ে ওঠেনি। মহিলার দাবি, তিনি স্বামীর সঙ্গে থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু ছেলেটির পরিবারের লোকজন তাঁকে জোর করে কলকাতার তালতলার বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য চাপ দেন৷ এমনকি বিবাহবিচ্ছেদ করার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়।

বাধ্য হয়ে মামলাকারী ২০১৩ সালের ১৬ অগস্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন৷ একাধিকবার তিনি কলকাতার তালতলার শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছেন কিন্তু তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকি তাঁর স্ত্রীধন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে সিআরপিসি ১২৫ ধারায় ১০ হাজার টাকা খরপোশ দাবি করে মামলা দায়ের করেন তিনি। ২০১৫ সালে নিম্ন আদালত মহিলার দাবি মেনে নিয়ে মাসিক চার হাজার টাকা করে খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দেন। মামলা করার খরচ হিসেবে আরও পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে কলকাতা হাইকোর্টও সেই নির্দেশ বহাল রাখে। কিন্তু ২০২৩ সালের জুন মাসে কলকাতার একটি পারিবারিক আদালতের নির্দেশে মহিলার খোরপোশের আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়। এরপরে বাধ্য হয়ে তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।

আদালতে স্বামীর তরফে দাবি করা হয়, তাঁদের পরিবারটি মহিলার পরিবারের থেকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল, উন্নত হলেও তাঁর নিজস্ব কোনও রোজগার নেই। ফলে তিনি কীভাবে খোরপোশের টাকা দেবেন! পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী মাসিক ১২ হাজার টাকা আয় করেন। তিনি ভরণপোষণের দায়িত্ব নিজেই চালাতে পারেন। কিন্তু বিচারপতি অজয় মুখোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, একজন শক্ত সমর্থ্য যুবক এই যুক্তিতে তাঁর আইনি দায়িত্ব বা কর্তব্য এড়িয়ে যেতে পারেন না।

আদালত জানিয়েছে, বেকার যুবক কিছু করে না-বলে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারে না। ওই যুবকের মনে রাখা উচিত, স্ত্রীকে কার্যত রাস্তায় বের করে দেওয়া হয়েছে৷ এখন স্ত্রী কিছু রোজগার করেন বলে স্ত্রীর প্রতি যে সামাজিক দায়িত্ব-কর্তব্য রয়েছে, তা তিনি অস্বীকার করতে পারেন না। সেই কারণে আদালত নির্দেশ দিচ্ছে স্ত্রীকে প্রত্যেক মাসের ১০ তারিখ মাসিক চার হাজার টাকা করে খোরপোশ দিতে হবে। এতদিনের বকেয়া টাকা ২০২৬ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে ১২টি কিস্তিতে মিটিয়ে দিতে হবে। না হলে আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও জানানো হয়েছে।


Share