China’s New DNA Threat

ডিএনএ ডেটার দাপট, ‘হুয়াওয়ের’ পর নতুন আতঙ্ক ‘বিজিআই’, সতর্ক করল আমেরিকার গোয়েন্দারা

আমেরিকার গোয়েন্দাদের সতর্কবার্তা—ফাইভ-জি নয়, ডিএনএ ডেটা নিয়ন্ত্রণ করেই বিশ্বের নিরাপত্তায় নতুন হুমকি হয়ে উঠছে চীনা জিনোমিক্স জায়ান্ট বিজিআই। হুয়াওয়ের প্রভাবকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বাড়ছে আমেরিকার উদ্বেগ।

প্রতীকী চিত্র।
নিজস্ব সংবাদদাতা, আমেরিকা
আমেরিকা
  • শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০১:১৮

এক দশক আগেও আমেরিকায় হুয়াওয়ের নাম ছিল অপরিচিত। আজ তা আমেরিকার শিল্প ও প্রশাসনের কাছে চীনের প্রযুক্তি খাতে দাপট ও নিরাপত্তায় ঝুঁকির প্রতীক। মার্কিন সেনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট মার্ক ওয়ার্নারের মতে, এ বার নতুন উদ্বেগের নাম ‘বিজিআই’। যে কোম্পানি ভবিষ্যতে প্রভাব ও ঝুঁকির দিক থেকে হুয়াওয়েকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। কারণ, ফাইভ-জি নয়, বিজিআই-এর মূল ভিত্তি হল ডিএনএ ডেটা।

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জিনোমিক্স সংস্থা বিজিআই শুধু চীনেই নয়, বিভিন্ন দেশে ডিএনএ সিকোয়েন্সিং ল্যাব পরিচালনা করে। হাসপাতাল, ওষুধ সংস্থা ও গবেষকদের জন্য জেনেটিক ডেটা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রেও তাদের ভূমিকা রয়েছে। বহু দেশে জাতীয় জেনেটিক ডাটাবেস ও মহামারী পরীক্ষার পরিকাঠামো তৈরিতে যুক্ত থেকেছে তারা।

সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেইজিং জিনোমিক্স ইনস্টিটিউট হিসেবে যাত্রা শুরু করা বিজিআই ধীরে ধীরে জিন সিকোয়েন্সিং, প্রসবপূর্ব পরীক্ষা, ক্যান্সার স্ক্রিনিংসহ নানা বাণিজ্যিক খাতে বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তার করেছে।

আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, বিজিআই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জেনেটিক তথ্যভান্ডারে প্রবেশাধিকার রাখে। বৃহৎ পরিসরের জিনগত তথ্য চিকিৎসা গবেষণার বাইরে গিয়ে নজরদারি, ট্র্যাকিং এবং কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই চালিত জৈবিক বিশ্লেষণের হাতিয়ার হতে পারে।

ওয়ার্নার জানান, যদি হুয়াওয়ে বড় হয়, বিজিআই আরও বড়। তারা ডিএনএ তথ্য গোপন করছে, আর সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা বৌদ্ধিক সম্পত্তি ও ব্যক্তিগত তথ্যের জন্য বড় হুমকি।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, চীন মানব-ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সামরিক প্রয়োজনে জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার পরীক্ষা করেছে। ডিএনএ সংগ্রহ, সামরিক ডাটাবেস এবং এআই-চালিত কর্মক্ষমতা বিশ্লেষণ সব মিলিয়ে চীনের লক্ষ্য ‘জিনগতভাবে উন্নত সৈনিক’ তৈরির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না মার্কিন বিশ্লেষকরা। এই আশঙ্কার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন ওয়ার্নারও।

ওয়ার্নারের মতে, আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলি বাণিজ্যিক প্রযুক্তি খাতে গুপ্তচরবৃত্তির ঝুঁকিকে আগে গুরুত্ব দেয়নি। ফলেই এসএমআইসি-এর ছয়-ন্যানোমিটার চিপ তৈরি আমেরিকার নীতি নির্ধারকদের হতবাক করেছে। যা ছিল রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার বাইরে যাওয়ার স্পষ্ট উদাহরণ।

তিনি জানান, এই ঘটনাই দেখায় চীনের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও বিধিনিষেধ অতিক্রম করার ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্র কম করে দেখেছে।

ওয়ার্নারের অভিযোগ, ট্রাম্প আমলে ‘ফাইভ আইজ’ গোয়েন্দা জোটে চাপ সৃষ্টি হয়েছিল। বর্তমানে যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্সের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিত্ররা সংবেদনশীল তথ্য ভাগ করে নিতে অনিচ্ছুক, কারণ তারা আশঙ্কা করছে, ট্রাম্পের প্রশাসন তথ্যকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে।

ওয়ার্নার সতর্ক করেছেন, প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক মান ও প্রোটোকল নির্ধারণে নেতৃত্ব হারানো আমেরিকার অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য বড় ক্ষতি হবে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কে মান নির্ধারণ করবে তাঁরা, নাকি চীন? তাঁর মতে, চীন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিতে ব্যাপক প্রকৌশলী নিয়োগ করে প্রভাব বিস্তার করছে, আর যুক্তরাষ্ট্রকে সেখানে নতুন করে সক্রিয় হতে হবে।


Share