Bangladesh Turmoil

ভারতকে টুকরো করে গ্রেটার বাংলাদেশ বানানোর ‘দিবা স্বপ্ন’! ১২ ডিসেম্বর গুলিবিদ্ধ হয় ইসলামিক সংগঠনের নেতা ওসমান হাদি, কে এই নেতা যার মৃত্যুর পর উত্তেজনা ছড়াল বাংলাদেশে!

বৃহস্পতিবার রাতভর বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় তান্ডব চালায় ইসলামিক সংগঠন সদস্যরা। রাস্তায় নেমে ভারত বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে তারা। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ভারতীয় হাইকমিশন অফিসে ঢুকে ভাঙচুরের চেষ্টা করে। ওই ‘মব’-এর সামনে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী কার্যত দর্শকের ভূমিকা পালন করে। শুক্রবার সারাদিন তারা হাইকমিশনের অফিসের বাইরে অবস্থান করে।

ইসলামিক সংগঠনের নেতা শরিফ ওসমান বিন হাদি।
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা
কলকাতা
  • শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৪৮

উত্তর-পূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, মণিপুর, অসম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ডএবং মেঘালয়কে একসঙ্গে ‘সেভেন সিস্টার্স’ বলা হয়ে থাকে। মৃত্যুর আগে এই ‘সেভেন সিস্টার্স’ দখলকরে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ বানানোর ‘দিবা স্বপ্ন’ দেখেছিল ইসলামিক সংগঠন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এরনেতা শরিফ ওসমান বিন হাদি। সে জন‍্য উত্তর-পূর্ব ভারতের জঙ্গি সংগঠনগুলিকে একত্রিত করার ডাকও দিয়েছিল সদ‍্যমৃত ওসমান বিন হাদি।

বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শরিফ ওসমান বিন হাদি বাংলাদেশের ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করে। হাদির বাবা ছিল মাদ্রাসার শিক্ষক। ওসমান নিজেও নেরাবাদ কামিল মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে। ৩২ বছর বয়সেই ওসমান ইসলামিক কট্টরপন্থা প্রচার করতে শুরু করে। সেই চিন্তাধারার ওপর নির্ভর করে তৈরি হওয়া ইসলামিক সংগঠন ‘ইনকিলাবমঞ্চ’- এর মুখপাত্র হয়ে ওঠে। পরে ওসমান ওই ইসলামিক সংগঠনের আহ্বায়ক হয়।

২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের পর ইসলামিক আন্দোলনে গতি আনতে ওসমান হাদি ভারতবিরোধী এবং হিন্দুবিদ্বেষী অবস্থান নেয়। সম্প্রতি ওসমানের হাদির কিছু বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়েছে।

গত ১২ ডিসেম্বর ওসমান হাদির ওপর হামলার আগে সে সমাজমাধ্যমে একটি বিতর্কিত পোস্টকরেছিল। সেই পোস্টে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’-এর একটি মানচিত্র দেখানো হয়েছিল। সেই পোস্টেউত্তর-পূর্ব ভারতের সাত রাজ্যকে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্ত করার ‘দিবা স্বপ্ন’ দেশের যুবকদের দেখানো হয়। শুধু তা-ই নয় ওসমান হাদি সেখানে হিন্দুবিদ্বেষী বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন।

ইসলামিক সংগঠন ‘ইনকিলাব মঞ্চ’-এর নেতা ওসমান হাদি মূলত আওয়ামি লিগ, ভারত এবং হিন্দুবিদ্বেষী বক্তব্য রাখার জন‍্য বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগের সমালোচনা করতে গিয়ে প্রায়ই ভারত বিরোধী বক্তব্যকে হাতিয়ার করেছে এই ওসমান হাদি। এর পরেই শরিফ ওসমান বিন হাদি ২০২৪ সালে বাংলাদেশে শুরু হওয়া শেখ হাসিনা এবং ভারত বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠে। সেই সময় এই সংগঠন আওয়ামি লিগের বিরোধিতায় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিল বলেও জানা যায়।

হাসিনা সরকার পতনের পরে সম্প্রতি বাংলাদেশে নির্বাচন ঘোষণা হয়েছে। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তা হওয়ার কথা রয়েছে। সেই নির্বাচনে ওসমান বিন হাদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। জানা গিয়েছে, ওসমান হাদি ঢাকা-৮ আসন থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করেছিল।

এ ছাড়াও, ওসমান বিন হাদি বিএনপি এবং ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ তুলেছিল। অভিযোগ ছিল, ইউনূস বাংলাদেশকে ভারতের প্রভাবমুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসলামিক নেতা ওসমানের মৃত্যুর পর ‘ইনকিলাব মঞ্চ’ ভারতের প্রসঙ্গ টেনে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে লেখে, “ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আল্লাহ্ মহান বিপ্লবী ওসমান হাদিকে শহিদ হিসেবে কবুল করেছেন।”

বৃহস্পতিবার এমন ‘ইসলামিক চরমপন্থী’ নেতার মৃত্যু সংবাদ সামনে আসতেই সারা দেশজুড়ে হিংসার ঘটনার সামনে আসে। ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলায় এক হিন্দু যুবককে গণপিটুনি দিয়ে হত‍্যা করে। তার পরে তাঁকে দড়ি দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় ইসলামিক দুস্কৃতীরা। বাদ যায়নি সংবাদমাধ্যমও। এক সাংবাদিককে গুলি করে ইসলামিক দুস্কৃতীরা। বাংলাদেশের প্রথম সারির বাংলা সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ এবং ইংরেজি দৈনিক ‘দ‍্য ডেইলি স্টার’-এর দফতরে ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে দেওয়া হয়। কোনও মতে ছাদে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে বাঁচেন সাংবাদিকেরা।

ওই দিন গোটা রাত বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় তান্ডব চালায় ইসলামিক দুস্কৃতীরা। রাস্তায় নেমে ভারত বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে তারা। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন অফিসে ঢুকে ভাঙচুরের চেষ্টাকরে। পুলিশ এবং সেনা কার্যত দর্শকের ভূমিকা পালন করে। শুক্রবার সারাদিন তারা হাইকমিশনের অফিসের বাইরে অবস্থান করে। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা এবং খুলনায় মুজিবর রহমানের বাড়িতে বুলডোজার নিয়ে এসে ভাঙচুর চালায়। ভাঙচুর হয়েছে আওয়ামি লিগের কার্যালয়ও। শুক্রবার ফের ইসলামিক দুস্কৃতীরা মুজিবের বাড়িতে ফের ভাঙচুর চালায়। 


Share