Saltlake Murder Bail

স্বর্ণব্যবসায়ীর খুন মামলায় প্রভাবশালী অভিযুক্তের আগাম জামিন, পরিবারে ক্ষোভ, তদন্তে প্রভাবের আশঙ্কা

স্বর্ণ–ব্যবসায়ী স্বপন কামিল্যা অপহরণ ও খুন মামলায় প্রশান্ত বর্মন বুধবার বারাসতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আদালত থেকে আগাম জামিন পেলেন। সপ্তাহে দু’দিন তদন্তকারী অফিসারের কাছে হাজিরা দিতে হবে প্রশান্তকে।

উত্তরবঙ্গের রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মন
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা
  • শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৫ ১২:৪৭

সল্টলেকের স্বর্ণ–ব্যবসায়ী স্বপন কামিল্যা অপহরণ ও খুন মামলায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত উত্তরবঙ্গের রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মন। তিনি বুধবার বারাসতের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা আদালত থেকে আগাম জামিন পেলেন। পুলিশ ঠিক সেই দিনই আদালতে রিপোর্ট জমা দেয়। ওই রিপোর্টে প্রশান্তকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তবুও জেলা জজ শান্তনু ঝা ৫০ হাজার টাকার বন্ডে শর্তসাপেক্ষে তাঁর আগাম জামিন মঞ্জুর করেন। শর্ত অনুযায়ী, সপ্তাহে দু’দিন তদন্তকারী অফিসারের কাছে হাজিরা দিতে হবে প্রশান্তকে।

পুলিশের রিপোর্টে কাউকে মূল অভিযুক্ত বলে উল্লেখ করার পর সাধারণত হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন পড়ে। বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটরও আদালতে সেই যুক্তিই দেন। কিন্তু বিচারকের সিদ্ধান্ত নিহত স্বপনের পরিবার সহ বারাসত আদালতের বহু আইনজীবীকেই বিস্মিত করেছে। প্রশ্ন উঠছে, এত তথ্য প্রমাণ হাতে থাকা সত্ত্বেও এতদিন কেন প্রশান্তকে গ্রেফতার করা হয়নি।

স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বপন কামিল্যাকে গত ২৮ অক্টোবর সল্টলেকের দত্তাবাদ এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়। অভিযোগ, রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মনের বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া সোনা স্বপন কিনেছেন। এই সন্দেহের জেরে বিডিও ও তাঁর সঙ্গীরা স্বপনকে নিউ টাউনের এবি ব্লকের একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক মারধর করেন। সরকারি দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও তিনি পুলিশে অভিযোগ না করে নিজের সিদ্ধান্তে পদক্ষেপ নেন। পরের দিন, ২৯ অক্টোবর যাত্রাগাছির বাগজোলা খালপাড় থেকে স্বপনের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। এরপর নিহতের পরিবার ৩১ অক্টোবর বিধাননগর দক্ষিণ থানায় বিডিও ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও খুনের অভিযোগ দায়ের করে।

তদন্তের শুরুতেই বিডিওর গাড়িচালক রাজু ঢালি এবং উত্তরবঙ্গের ঠিকাদার তুফান থাপাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা দফতরে মামলার তদন্তভার যায়। তাঁরা কোচবিহারের তৃণমূল নেতা সজল সরকার ও তাঁর গাড়িচালক বিবেকানন্দ সরকারকে গ্রেফতার করে। কিন্তু বারবার আবেদন সত্ত্বেও বিডিও প্রশান্তকে পুলিশ শুধু জিজ্ঞাসাবাদও করেনি বলে নিহতের পরিবার অভিযোগ করে।

এই পরিস্থিতিতে প্রশান্ত বারাসত আদালতে আগাম জামিনের আবেদন জানান। শুনানিতে স্পেশাল পিপি বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, স্বপনের আধার কার্ডের সূত্র ধরে ঠিকানা খুঁজে বের করে তাঁকে দাঁতনের বাড়ি থেকে তুলে আনা হয়। ময়নাতদন্তে ব্যবসায়ীর দেহে ৩২টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের কাছে থাকা ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, বিডিও নিজে জুতো ও বেল্ট দিয়ে তাঁকে মারধর করছেন। নিউ টাউনের ফ্ল্যাটটি বায়োমেট্রিক সিস্টেমে নিয়ন্ত্রিত, যা বিডিও ছাড়া কেউ খুলতে পারে না। তাই তাঁকে গ্রেফতার করা জরুরি বলে দাবি করেন স্পেশাল পিপি।

অন্যদিকে, নিজেকে ‘দাবাং বিডিও’ দাবি করা প্রশান্ত বর্মন সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ করেন, তিনি রাজবংশী হওয়ায় তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না বলে দাবি করেন। বিমানে কলকাতা আসার কথাও অস্বীকার করেন। আদালতে তাঁর আইনজীবী জানান, এফআইআর–এ নাম থাকায় আগাম জামিন ছাড়া উপায় নেই।

শেষ পর্যন্ত বিচারক সরকার পক্ষের যুক্তি খারিজ করে প্রশান্তের আগাম জামিনের আবেদনই মঞ্জুর করেন। ফলে প্রশ্ন উঠছে, প্রভাবশালী হওয়ায় কি তিনি এই সুবিধা পেলেন? নিহত স্বপনের পরিবার আশঙ্কা করছে, মুক্ত অবস্থায় বিডিও তদন্তে প্রভাব ফেলতে পারেন, সাক্ষীদের ভয় দেখাতেও পারেন।


Share