Groundwater Crisis in India in Future

ভারতের কৃষিতে ভূগর্ভস্থ জলের সংকট: ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক সংকেত

গত কয়েক দশকে ভারতের কৃষি উৎপাদন অভূতপূর্ব হারে বেড়েছে। কিন্তু এই বৃদ্ধির পিছনে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে, তা হল ভূগর্ভস্থ জল। দেশের অধিকাংশ চাষই এখন মাটির নিচ থেকে তোলা জলের উপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলোতে। তবে উদ্বেগের বিষয়, ভূগর্ভস্থ জল এই অতিরিক্ত ব্যবহার সামলাতে পারছে না। যার ফলে ভারতের বিস্তীর্ণ অংশ আজ এক গভীর জলের সংকটের মুখে।

প্রতীকী চিত্র
নিজস্ব সংবাদদাতা: কলকাতা
নিজস্ব চিত্র
  • শেষ আপডেট:০৭ জুলাই ২০২৫ ০৭:১০

গত কয়েক দশকে ভারতের কৃষি উৎপাদন অভূতপূর্ব হারে বেড়েছে। কিন্তু এই বৃদ্ধির পিছনে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে, তা হল ভূগর্ভস্থ জল। দেশের অধিকাংশ চাষই এখন মাটির নিচ থেকে তোলা জলের উপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে উত্তর এবং পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলোতে। তবে উদ্বেগের বিষয়, ভূগর্ভস্থ জল এই অতিরিক্ত ব্যবহার সামলাতে পারছে না। যার ফলে ভারতের বিস্তীর্ণ অংশ আজ এক গভীর জলের সংকটের মুখে

ধান, গম, আখ ও তুলোর মতো ফসলের চাষে বিপুল পরিমাণে জল লাগে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য এই শস্যগুলির প্রধান উৎপাদক। ফলে এখানকার কৃষকরা নিরন্তরভাবে মাটির নিচ থেকে বিপুল পরিমাণ জল তুলে চলেছেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অনেক ব্লকে বার্ষিকভাবে যে পরিমাণ জল মাটির নিচে সঞ্চিত হয়, তার তুলনায় অনেক বেশি জল উত্তোলন করা হচ্ছে, ফলে অ্যাকুইফায়ার দ্রুত ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে, এবং একই সঙ্গে বৃষ্টিপাতের ধরনও অনিয়মিত হয়ে উঠছে। এর ফলে সেচের প্রয়োজন আরও বেড়েছে। এই চক্রবৃদ্ধি সমস্যা কৃষিকে এক ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

চিনের উদাহরণ এ ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ। তারা বিশ্বের শীর্ষ ধান উৎপাদনকারী দেশ হয়েও জল সংরক্ষণের স্বার্থে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, ধান চাষের ফলে উত্তর চিনের জলস্তর আরও নিচে নেমে যাচ্ছিল। এই বাস্তবতা মেনে তারা নিজের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সঙ্কল্পবদ্ধ হয়েছে। ভারতও চাইলে এই নীতিগত পদক্ষেপ থেকে শিক্ষা নিতে পারে।

সমস্যার গভীরতা বোঝাতে একটি সমীক্ষা বলছে, চলতি শতকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতের প্রধান খাদ্যশস্য উৎপাদন ১৫-২০ শতাংশ কমে যেতে পারে, যদি এই হারে ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার চলতে থাকে। এর প্রভাব পড়বে খাদ্য মূল্যের উপর, পুষ্টির অভাবে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যায়, এবং কৃষিজীবী সমাজের আয়ে।

এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে সমাধানগুলো আজ প্রয়োজন:

  1. ফসলের বৈচিত্র্য আনা: ধান, গম বা আখের মতো জলোপযোগী শস্যের পরিবর্তে বাজরা, ডাল, সূর্যমুখী কিংবা ভুট্টার মতো কম জলের ফসলের দিকে ঝোঁক বাড়ানো দরকার।
  2. অর্থনৈতিকভাবে সহায়ক নীতিমালা: কৃষকদের বিকল্প শস্যের জন্য ভর্তুকি ও বাজার-নিশ্চয়তা দিলে তারা ধীরে ধীরে সেচ-নির্ভর ফসল থেকে সরে আসতে পারবেন।
  3. জল সাশ্রয় প্রযুক্তি: আধুনিক সেচ পদ্ধতি যেমন ড্রিপ ও স্প্রিংকলার সিস্টেমকে ব্যাপকভাবে প্রচলিত করতে হবে, বিশেষত যেসব এলাকায় ভূজল তীব্রভাবে কমছে।
  4. অবৈধ জল উত্তোলন বন্ধে নজরদারি: ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে সমন্বিত ভূমিকা নিতে হবে।
  5. সচেতনতা ও শিক্ষা: কৃষকদের মধ্যে জল সংরক্ষণের গুরুত্ব ও বিকল্প চাষপদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

নতুন গবেষণা দেখিয়েছে, সঠিক পরিকল্পনা ও শস্য নির্বাচন করলে শুধু জল সংরক্ষণই নয়, কৃষকের আয় এবং খাদ্য উৎপাদন—দুটিই একসঙ্গে বাড়ানো সম্ভব। এর ফলে ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে।

ভূগর্ভস্থ জল একবার শেষ হয়ে গেলে তা সহজে ফিরে আসে না। তাই এখনই সময়, আমরা আমাদের কৃষিনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনি। বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা, বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত এবং কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেশের কৃষি ও জলসম্পদকে ভবিষ্যতের জন্য রক্ষা করতে পারি।


Share