Special Intensive Rivision

নথিহীন ভোটার ও নববিবাহিত মহিলাদের নাম তোলায় বিশেষ নজর, ব্লকে শুরু ‘মে আই হেল্প ইউ’ ক্যাম্প

তৃণমূল ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের দ্বিতীয় পর্বে পরিযায়ী শ্রমিক, নথিহীন ভোটার ও সদ্য বিবাহিত মহিলাদের নাম তোলায় জোর দিচ্ছে। বুথ–ব্লক স্তরে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। ‘দিদির দূত’ অ্যাপে তথ্যসংগ্রহসহ সংগঠিত প্রস্তুতি চলছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা
  • শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:১৩

ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ার প্রথম পর্ব বৃহস্পতিবার শেষ হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার প্রকাশিত হবে খসড়া ভোটার তালিকা, এরপরই শুরু হবে দ্বিতীয় পর্ব। তবে প্রথম পর্ব শেষ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। ভোট রক্ষার লড়াইয়ে দ্বিতীয় দফায় বিশেষ কৌশল সাজিয়েছে শাসক দল।

রাজ্যের বাইরে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ তৃণমূল গত কয়েক মাস ধরেই নিচ্ছিল। সরকারও তাঁদের উৎসাহিত করতে বিশেষ প্রকল্প শুরু করেছিল। যদিও প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি, প্রথম পর্বে পরিযায়ী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ তৃণমূলকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলায় অনেক শ্রমিক এখনও ফেরেননি বলে দলের অন্দরে হিসাব বলছে। পরিবারের সদস্যরা এনুমারেশন ফর্ম জমা দিলেও তাঁদের নাম খসড়া তালিকায় উঠবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তাই দ্বিতীয় পর্বে শাসকদল এই পরিযায়ী শ্রমিকদের সশরীরে এনে শুনানির কাজে বিশেষ জোর দিচ্ছে। বুথ ও ব্লক স্তরের সংগঠনকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আর তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন জেলা সভাপতি ও বিধায়করা।

নথিহীন ভোটারদের নাম তোলাও দ্বিতীয় পর্বে তৃণমূলের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এমন অনেক মানুষ আছেন, যাদের পরিবারের কেউ ২০০২ সালের তালিকায় নেই এবং যাদের হাতে কমিশনের নির্ধারিত কোনও নথিও নেই। এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে সরকারও। মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, ১২ ডিসেম্বর থেকে প্রতিটি ব্লকে ‘মে আই হেল্প ইউ’ ক্যাম্প হবে, যেখানে সরকারি আধিকারিকরা নথি তৈরিতে সহায়তা করবেন। কিন্তু সেই ভোটারদের শিবির পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া এবং নথি তৈরির প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করার দায়িত্ব থাকবে স্থানীয় সংগঠনের উপরে। তৃণমূল ইতিমধ্যেই নথিহীনদের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করে রেখেছে।

সদ্য বিবাহিত মহিলাদের নাম তোলা নিয়েও আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছে শাসকদল। যাঁরা বিয়ের পরে অন্য জেলা বা রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন, তাঁদের তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা হবে বিশেষভাবে। যদিও দলের হিসেব, এই ক্ষেত্রের সংখ্যা খুব বেশি নয়, তবে রাজনৈতিকভাবে তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিতেই এই উদ্যোগ।

প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও তৃণমূল পুরসভা ও পঞ্চায়েতের অস্থায়ী কর্মীদের কাজে লাগাতে চাইছে। স্থানীয় স্তরে দলের গড়ে তোলা অর্থনৈতিক কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত এই বাহিনী প্রথম পর্বেই সক্রিয় ছিল। দ্বিতীয় পর্বে সেই কাজ আরও বেশি সংগঠিত ভাবে চালাতে চাইছে দল। কারণ এই পর্যায়ের কাজ পুরোপুরি প্রশাসনের হাতে থাকবে, আর সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মীরা কমিশনের মনোনীত আধিকারিক হিসেবেই দায়িত্ব পালন করবেন।

একই সঙ্গে নতুন ভোটারদের নাম তোলার বিষয়েও সতর্ক তৃণমূল। দলের আশঙ্কা, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে ভুয়ো ভোটারের নাম তালিকায় ঢোকানো হতে পারে। তাই স্থানীয় স্তরের নজরদারির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মৃত ভোটারদের নাম বাদ যাওয়ার ক্ষেত্রে কমিশনকে নথি দেখাতে বাধ্য করার চাপ তৈরি করারও প্রস্তুতি নিচ্ছে শাসকদল। তাঁদের ধারণা, এতে হয়তো তালিকায় নাম যোগ হবে না, কিন্তু প্রয়োজনে মামলা করে কমিশনকে চাপে ফেলা সম্ভব হবে।

‘দিদির দূত’ অ্যাপের মাধ্যমে আলাদা তথ্য ভান্ডারও তৈরি করছে তৃণমূল, যা তদারকি করছে সরকার ও দলের পরামর্শদাতা সংস্থা। বিধানসভা ধরে ধরে এই সব হিসাব রাখা হচ্ছে। শাসকদলের শীর্ষ নেতারাও স্বীকার করছেন, প্রথম পর্ব এক রকম ভাবে হয়েছে, কিন্তু দ্বিতীয় পর্বই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।


Share