Special CAA Camp Will Be Opened By BJP

বিহার বাদে দেশের বাকি সব রাজ্যে হবে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)। সেই জল্পনার মধ্যেই, সিএএ (নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন) নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিশেষ শিবির করবে রাজ্য বিজেপি! রাজনৈতিক মহলের মতে, আরএসএসের পরামর্শেই এই শিবির তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার সল্টলেকে বিজেপির রাজ্য কার্যালয়ে এই নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ। তিনি আরএসএসের তরফে বিজেপি সঙ্গে সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। তাঁর উপস্থিতিতেই সিএএ সংক্রান্ত বৈঠক হয়। আরএসএস নেতৃত্বের বার্তা বিজেপির কর্মীদের কাছে পৌঁছানোর জন্যই বি এল সন্তোষ, অমিতাভ চক্রবর্তীদের উপস্থিতি বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়াও শ্রোতা-দর্শকদের আসনে শচীন্দ্রনাথ সিংহ-সহ একাধিক আরএসএস নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন।
রাজ‍্য বিজেপি সুত্রের খবর, সিএএ নিয়ে রাজ্যজুড়ে অন্তত ৭০০ শিবির করার ভাবনাচিন্তা চলেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। ভোটার তালিকা থেকে মৃত, ‘বাংলাদেশি মুসলমান’-সহ যার নাম একাধিক কেন্দ্রে রয়েছে-তাদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে বিজেপি। 
অন‍্য দিকে, সীমান্তবর্তী একাধিক এলাকার ভোটার তালিকায় বাংলাদেশের হিন্দু নাগরিকের নাম থাকার বিভিন্ন খবর বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে। সেই নাম তালিকায় রাখার দাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর থেকে বিধায়ক অসীম সরকার, সুব্রত ঠাকুরেরা। কোনও হিন্দু (শরণার্থী)-র নাম যেন বাদ না যায় তা নিয়ে কেশব ভবন (আরএসএসে পূর্ব ক্ষেত্রীয় দফতর)-এ নিয়মিত দরবার করেছেন সঙ্ঘের দক্ষিণবঙ্গ, মধ‍্যবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের বিভাগ, জেলা, মণ্ডল ও নগরস্তরের একাধিক প্রচারক-কার্যবাহ-সঙ্ঘচালকেরা। 
দিল্লিতে সঙ্ঘের শতবর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানে ভাষণের পরে সরসঙ্ঘচালক মোহনরাও ভাগবতের কাছে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন কয়েকজন প্রবীণ স্বয়ংসেবক। তারপরেই বিষয়টি নিয়ে বি এল সন্তোষকে বার্তা দেওয়া হয়। দিল্লিতে সঙ্ঘের মাসিক সমন্বয় বৈঠকেও বি এল সন্তোষকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। তারপরেই বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব নড়ে‍চড়ে বসে।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, যারা ধর্মীয় উৎপীড়ণের কারণে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়ায় নতুন আইনের প্রনয়ন ইতোমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। এমন অনেক মানুষের হাতে নাগরিকত্বের শংসাপত্র তুলে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। তবে এখনও অনেকে নাগরিকত্বের শংসাপত্র পাননি। তারা কী ভাবে নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেতে পারেন, তারই প্রচার এই শিবির থেকে করা হতে পারে বলে বিজেপি সূত্রের খবর। 
অন‍্য দিকে, ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর পরে এমন কেউ (বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু) যদি তালিকা থেকে বাদ পড়েন, তাহলে তাঁরা এ দেশে ‘নাগরিকত্ব’ কী ভাবে পেতে পারেন, তারও প্রচার করা হতে পারে এই শিবির থেকে। তাঁরা কী ভাবে ফর্ম পূরণ করে আবেদন জানাতে পারবেন, তা-ও দেখানো হতে পারে এই বিশেষ শিবির থেকে। বিজেপি সুত্রের খবর, গোটা রাজ্যে জুড়ে অন্তত ৭০০টি সিএএ শিবির করা হবে। রাজ্য বিজেপি সুত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, নদিয়া, কোচবিহার, দুই ২৪ পরগনা, মালদহ এবং মুর্শিদাবাদের মতো জেলায় বিশেষ নজর দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ দিনের বৈঠকে বি এল সন্তোষ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অমিতাভ চক্রবর্তী, অমিত মালব‍্য, জগন্নাথ সরকার, অসীমকুমার সরকার-সহ একাধিক বিজেপি নেতৃত্ব। 
রাজ্য বিজেপির এক সাধারণ সম্পাদকের কথায়, “আমাদের কাছে অত্যন্ত উদ্বেগজনক তথ্য এখনও পর্যন্ত উঠে এসেছে। গত ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিএলও এবং বিভিন্ন স্থানীয় সূত্র থেকে আমাদের কাছে ২০০২ এবং ২০২৫ সালের যে ম্যাপিং এসেছে, তাতে আমরা দেখছি, অর্ধেকের বেশি ভোটার পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা নন।” যদিও বিজেপি নেতৃত্বের এই দাবি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সংশয় রয়েছে। আরএসএস নেতৃত্ব অবশ্য এই অদ্ভুত যুক্তির কথা মানতে নারাজ। তাঁরা গোটা প্রক্রিয়া শুরু না হলে কোনও তথ্য সামনে আসবে না বলে মনে করছেন।