Suvendu On Nagrakata Issue

নাগরাকাটা-কান্ড নিয়ে রাজ্যপালের ওপর ‘অসন্তুষ্ট’ বিজেপি, মানুষ ‘অ‍্যাকশন’ চাইছে, মন্তব্য বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর

বুধবার রাজ‍্যপাল সিভি আনন্দ বোস দেশের রাষ্ট্রপতির দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাজ‍্যের পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট দেন। এর পর সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যপাল বোস। তিনি বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়েছে, পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। এ ভাবে চলতে পারে না।"

জখম সাংসদের সঙ্গে কথা বলছেন রাজ্যপাল।
বৈশালী কর্মকার, কলকাতা
  • শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৫ ১১:১৮

নাগরাকাটায় বিজেপি সাংসদ এবং বিধায়ক আক্রান্ত হওয়ার পর রাজ্যে ‘গুণ্ডারাজ’ চলছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন রাজ‍্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যের কাছে রিপোর্টও চেয়েছেন রাজ্যপাল। এই বিষয় নিয়ে রাস্ট্রপতির সঙ্গেও দেখা করেছেন। এ বার তা নিয়ে ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করল বিজেপি। বৃহস্পতিবার রাজ‍্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, মানুষ ‘অ‍্যাকশন’ চাইছে।

এ দিন সল্টলেকের কার্যালয়ে সাংগঠনিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ভুপেন্দ্র যাদব, বিপ্লবকুমার দেব, শুভেন্দু অধিকারী-সহ রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতারা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, “রাজ‍্যপাল মুর্শিদাবাদের গোষ্ঠী সংঘর্ষের পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে জানিয়েছিলেন, এটা শেষ ঘটনা। এর পর কোনও ঘটনা ঘটলে সাংবিধানিক হস্তক্ষেপ হবে।” শুভেন্দু আরও বলেন, “তার পরেও একাধিক ঘটনা ঘটেছে। আমার বুলেটপ্রুফ গাড়ি ছিল বলে অক্ষত ছিলাম। নিশিথ প্রামাণিক অক্ষত। বুলেটপ্রুফ গাড়ি থাকলে শঙ্কর ঘোষ, খগেন মুর্মুও অক্ষত থাকতেন। তাঁরা সাধারণ গাড়ি ছিল বলে গাড়ি পাথর দিয়ে মেরে, ভেঙে চোখে মুখে কাঁচ লেগে যা হওয়ার হয়েছে। রক্ত দেখেছেন মানুষ।”

এ দিন সরাসরি রাজ‍্যপালকে নিশানা করে কিছু না বললেও শুভেন্দু বেঝাতে চেয়েছেন, এতো ঘটনার পরেও কোনও সাংবিধানিক কড়া পদক্ষেপ নেননি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তিনি বলেন, “আমি আইন মেনে চলা মানুষ। বিরোধী দলনেতা হিসেবে আমি কিছু বলতে পারি না। রাজ‍্যপাল নিয়ম মেনে রিপোর্ট রাষ্ট্রপতিকে দিন, ভারত সরকারকে দিন। কাজটা ওঁর।” শুভেন্দুর সংযোজন, “মানুষ দৃশ‍্যমান পদক্ষেপ দেখতে চাইছে। রাজ‍্যপাল সুপারিশ করে এমন অ্যাকশন (পদক্ষেপ) নিন, যা চোখে দেখা যায়। মানুষের আবেগের কথা বললাম। দলমত নির্বিশেষে কিন্তু সাবাই চাইছে।” তবে কী ধরনের ‘দৃশ‍্যমান পদক্ষেপ‍’ তা স্পষ্ট করেননি তিনি। রাজ্যে পর পর ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে রাজ‍্যপাল সিভি আনন্দ বোসের ‘মৃদু’ পদক্ষেপে যে ‘অসন্তুষ্ট’ বিজেপি, তা শুভেন্দুর কথায় স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

প্রসঙ্গত, ভারী বৃষ্টিতে কার্যত বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। সেই বিপর্যয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৫ জন। ব‍্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেই সব জায়গায়। আগামী ৬ অক্টোবর সেসব এলাকা পরিদর্শনে যান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ঘটনাচক্রে সেই দিনই নাগরাকাটায় দুর্যোগকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু এবং শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। সেখানে গিয়ে তাঁরা বিক্ষোভের মুখে পড়েন। ভাঙচুর করা হয় গাড়ি। পাথরের আঘাতে নাক-মুখ ফেটে যায় খগেনের। রক্তে ভিজে যায় সাংসদের পোষাক। সাংসদের চোখের তলায় হাড় ভেঙেছে বলে জানা গিয়েছে। শঙ্করের হাতে আঘাত লাগে। বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও সাংসদ খগেন মুর্মু এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখাও করেন রাজ্যপাল।

বুধবার রাজ‍্যপাল সিভি আনন্দ বোস দেশের রাষ্ট্রপতির দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাজ‍্যের পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট দেন। এর পর সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যপাল বোস। তিনি বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমার মনে হয়েছে, পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। এ ভাবে চলতে পারে না।" 

মঙ্গলবার রাজ‍্যপাল বোস এ-ও বলেন, "গণতন্ত্রে ভিন্নমত থাকে। রাজ্যপাল হিসেবে সব কিছু বিবেচনা করে দেখা উচিত। মাঠে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে, তবেই আমার কিছু সুপারিশ করা উচিত। রাজ্যপাল হিসেবে কী সুপারিশ করব, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। কিন্তু কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।" বিজেপি সাংসদ এবং বিধায়কের প্রহৃত হওয়ার ঘটনায় উপযুক্ত পদক্ষেপ করার সময় এসেছে বলেও জানিয়েছেন রাজ‍্যপাল।


Share