Mandatory Sanchaar Saathi Debate

স্মার্টফোনে বাধ্যতামূলক ‘সঞ্চার সাথী’ প্রি-ইনস্টল, গোপনীয়তা বনাম সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে তুমুল বিতর্ক

কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রকের নির্দেশে সব নতুন স্মার্টফোনে বাধ্যতামূলকভাবে ‘সঞ্চার সাথী’ প্রি-ইনস্টল করা হবে। গোপনীয়তা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কায় বিশেষজ্ঞদের আপত্তি, যদিও সরকার দাবি করেছে এটি সাইবার নিরাপত্তার জন্য জরুরি।

প্রতীকী চিত্র
নিজস্ব সংবাদদাতা, দিল্লি
  • শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:৩৬

দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা জোরদার করতে বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলেছে কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রক। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এখন থেকে ভারতে বিক্রি হওয়া সমস্ত নতুন স্মার্টফোনে বাধ্যতামূলকভাবে প্রি-ইনস্টল করতে হবে রাষ্ট্রায়ত্ত সাইবার সিকিউরিটি অ্যাপ ‘সঞ্চার সাথী’। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ব্যবহারকারীরা ফোন থেকে এই অ্যাপ ডিলিটও করতে পারবেন না।

নির্দেশের সময়সীমা ৯০ দিন

২৮ নভেম্বর জারি করা এই নির্দেশটি প্রকাশ্যে আনা হয়নি। অ্যাপ্‌ল, স্যামসাং, ভিভো, ওপ্পো, শাওমি সহ সমস্ত বড় নির্মাতা সংস্থাকে পৃথক ভাবে জানানো হয়েছে যে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে নতুন ফোনে অ্যাপটি যুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি সাপ্লাই চেনে থাকা প্রস্তুত ফোন ও বাজারে ব্যবহৃত হ্যান্ডসেটগুলিতেও সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে অ্যাপ পাঠানো হবে। এটি ডাউনলোড করতেই হবে গ্রাহকদের।

ভুয়ো বা নকল আইএমইআই ব্যবহার করে প্রতারণা, হ্যাকিং ও সাইবার অপরাধ বাড়তে থাকায় এই সিদ্ধান্ত অপরিহার্য বলে দাবি সরকারের। জানুয়ারি মাসে চালু হওয়া ‘সঞ্চার সাথী’ ইতিমধ্যেই ৫০ লক্ষেরও বেশি বার ডাউনলোড হয়েছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, অ্যাপটির মাধ্যমে ৩৭ লক্ষের বেশি হারানো ফোন ব্লক করা হয়েছে, বন্ধ হয়েছে ৩ কোটিরও বেশি ফেক মোবাইল কানেকশন, আর কেবল অক্টোবরেই উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার ফোন।

এই বাধ্যতামূলক প্রি-ইনস্টল নীতি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও প্রাইভেসি অধিকার কর্মীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। প্রযুক্তি আইন বিশেষজ্ঞ মিশি চৌধুরীর মতে, এই সিদ্ধান্ত 'ব্যবহারকারীর সম্মতির অধিকারকে অবজ্ঞা' করছে। কোন অ্যাপ কেউ ইনস্টল করবেন, সেই সিদ্ধান্ত গ্রাহকের হওয়া উচিত বলেই দাবি তাঁর।

অ্যাপ্‌লের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি জটিল। সংস্থার নীতি অনুযায়ী তারা কোনও তৃতীয় পক্ষ বা সরকারি অ্যাপ প্রি-ইনস্টল করে না। যদিও ভারতে অ্যাপ্‌লের বাজার শেয়ার মাত্র ৪.৫%, তবুও নীতিগত কারণে তাদের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ বলে মত বিশ্লেষকদের। অনেকের অনুমান, অ্যাপ্‌ল এই নির্দেশের সরাসরি বিরোধিতা না করে এমন কোনও সমাধান খুঁজতে পারে যেখানে অ্যাপটি বাধ্যতামূলক না করে শুধু ইনস্টলের পরামর্শ দেওয়া হবে।

বাজারে প্রভাব ও ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা

ভারতে বর্তমানে মোবাইল গ্রাহকসংখ্যা ১২০ কোটির বেশি। এত বিশাল বাজারে এমন সিদ্ধান্ত প্রযুক্তি শিল্পে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে সর্বত্র। সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করার উদ্দেশ্য থাকলেও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও প্রযুক্তি সংস্থার স্বাধীনতার প্রশ্ন সামনে এনে দিল এই নির্দেশ।

সরকার দাবি করেছে, এই অ্যাপে কোনও ধরনের নজরদারির ব্যবস্থা নেই—শুধু ভুয়ো কল, স্প্যাম, চুরি যাওয়া ফোনের অভিযোগ ও ট্র্যাকিং-সংক্রান্ত পরিষেবা পাওয়ার সুবিধা থাকবে। যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশ এ দাবি মানতে নারাজ। তাঁদের মতে, এটি নাগরিকের গোপনীয়তার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ।

সরকার ও সংস্থাগুলির নীরবতা

রয়টার্সের দাবি, এই বিষয়ে তারা সব বড় স্মার্টফোন সংস্থা এবং টেলিকম মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সোমবার রাত পর্যন্ত কেউই কোনও মন্তব্য করেনি। তবে শিল্পমহলে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে—কোনও জনপরামর্শ ছাড়াই এত বড় সিদ্ধান্ত কেন চাপিয়ে দেওয়া হল?

আগামী দিনে এই নির্দেশ নিয়ে কেন্দ্র, প্রযুক্তি সংস্থা এবং গোপনীয়তা রক্ষা সংগঠনগুলির মধ্যে আরও টানাপড়েন তৈরি হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।


Share