Nobel Prize In Chemistry

যুগান্তকারী আবিষ্কার! স্থায়ী ‘এমওএফ’ তৈরি করে রসায়নে নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী

এই যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। তখন রিচার্ড রবসন ধনাত্মক বিভবযুক্ত ধাতব কপার আয়নের সঙ্গে চারটি হাতবিশিষ্ট এক অণুর সংমিশ্রণ ঘটান। এতে তিনি অসংখ্য ফাঁপা গহ্বরযুক্ত একটি কেলাস তৈরি করেন। তবে তাঁর তৈরি করা প্রাথমিক গঠনগুলি স্থিতিশীল ছিল না।

(বাঁ দিক থেকে) সাসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন এবং ওমর এম ইয়াগি।
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা
  • শেষ আপডেট:০৮ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৫১

ঘোষণা করা হল ২০২৫ সালের রসায়নে নোবেল পুরস্কার। এ বছর রসায়নে নোবেল পেলেন জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাসুমু কিতাগাওয়া, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিচার্ড রবসন এবং আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওমর এম ইয়াগি। তাঁরা মেটাল–অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস (এমওএফ) আবিষ্কার করেছেন। যৌথভাবে এই তিন বিজ্ঞানী নোবেল পেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস জানিয়েছে, এই তিন বিজ্ঞানী রসায়নের নতুন নিয়ম তৈরি করেছেন। প্রকাশিত বিবৃতিতে তাঁরা বলছে, বিজ্ঞানীরা এক ধরনের আণবিক কাঠামো তৈরি করেছেন। যেখানে ধাতব আয়নগুলি কাঠামোর ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। সেগুলিকে সংযুক্ত করে দীর্ঘ কার্বনভিত্তিক জৈব অণু। একত্রে, এই ধাতব আয়ন ও জৈব অণুগুলি একটি কেলাস (ক্রিস্টাল) গঠন করে। যে হেতু কেলাস গঠন হচ্ছে, তাতে অসংখ্য ফাঁপা গহ্বর হবেই। এই ছিদ্রযুক্ত পদার্থগুলিকেই বলা হয় মেটাল–অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস (এমওএফ)।

এর আগে জৈবধাতব পদার্থের ক্ষেত্রে এক অথবা দু’টি ধাতব আয়ন থাকে। নতুন এই আবিষ্কারে একাধিক ধাতব অনু জৈব অনুর সঙ্গে থাকতে পারবে। বিভিন্ন ধাতব আয়ন ও অণু ব্যবহার করে এওএফ-এর গঠন পরিবর্তন করা যাবে। সেটা স্থায়ী হবে। ইচ্ছেমতো গঠনও পরিবর্তন করা যাবে। এর ফলে নির্দিষ্ট গ্যাস বা রাসায়নিক পদার্থ ধারণ বা সংরক্ষণে এদের ব্যবহার সম্ভব হবে। এমনকি এগুলি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক বিক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে অনুঘটকের কাজও করবে। এ ছাড়াও বিদ্যুৎ পরিবাহক হিসেবেও কাজ করতে পারবে এই এমওএফ।

এই যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। তখন রিচার্ড রবসন ধনাত্মক বিভবযুক্ত ধাতব কপার আয়নের সঙ্গে চারটি হাতবিশিষ্ট এক অণুর সংমিশ্রণ ঘটান। এতে তিনি অসংখ্য ফাঁপা গহ্বরযুক্ত একটি কেলাস তৈরি করেন। তবে তাঁর তৈরি করা প্রাথমিক গঠনগুলি স্থিতিশীল ছিল না। পরে সেগুলিকে একত্রিত করে তিনি একটি সুসংবদ্ধ ও প্রশস্ত কেলাস তৈরি করেন।

এর পরে ১৯৯২ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে সাসুমু কিতাগাওয়া ও ওমর ইয়াগি এই গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান। কিতাগাওয়া দেখান যে, গ্যাস এ সব কাঠামোর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। এগুলির গঠন অত‍্যন্ত নমনীয়। আর ইয়াগি এমন স্থিতিশীল একটি এমওএফ তৈরি করেন যেগুলো নির্দিষ্ট প্রয়োজনে পরিবর্তনযোগ্য হতে পারে।

নোবেল কমিটির চেয়ার হেইনার লিঙ্কে বলেন, “মেটাল–অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস একটি  সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। যা ইচ্ছাকৃত ভাবে বা উদ্দেশ্যনির্ভর নতুন বৈশিষ্ট্যের পদার্থ তৈরির এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে।”

উল্লেখ্য, রসায়নে নোবেল পুরস্কার সবসময়ই যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক সাফল্যকে সম্মান জানিয়ে এসেছে। ১৯০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১১৬টি রসায়নে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। ১৯৭ জন বিজ্ঞানী, যাদের মধ্যে দু’জন—ফ্রেডেরিক স্যাঙ্গার ও ব্যারি শার্পলেস— দু’বার পুরস্কৃত হয়েছেন। অর্থাৎ মোট ১৯৫ জন পৃথক ব্যক্তি এই সম্মান পেয়েছেন।

১৯৩৫ সালে সবচেয়ে কম বয়সে রসায়ন নোবেল পেয়েছেন ফ্রিদরিক জোলিও।  তিনি ৩৫ বছর বয়সে তাঁর স্ত্রী ইরিন জোলিও কুরি-র সঙ্গে পুরস্কার পান। সবচেয়ে প্রবীণ নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী জন বি গুডইনাফ। তিনি ২০১৯ সালে ৯৭ বছর বয়সে পুরস্কৃত হন।

এখনও পর্যন্ত রসায়নে মোট আটজন নারী নোবেল পেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য ভাবে, মেরি কুরি ও তাঁর কন্যা ইরিন জোলিও কুরি ইতিহাসে একমাত্র মা–মেয়ে জুটি, যারা দু’জনেই রসায়নে নোবেল পুরস্কার জিতেছেন।


Share