School Service Commission

এসএসসি মামলায় শিক্ষক–শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে বাড়ছে বিভাজন, বঞ্চনার অভিযোগ ‘আন–টেন্টেড’ কর্মীদের

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের চাকরি বাড়লেও সম্পূর্ণ বঞ্চিত শিক্ষাকর্মীরা। ন’মাস বেতনহীন, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। নতুন নিয়োগ–সূচি নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ, আতঙ্ক ও বৈষম্যের অভিযোগ।

এসএসসি ভবন
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা
  • শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০২:১২

২০১৬ সালের এসএসসি–র নিয়োগ প্যানেল সম্পূর্ণ বাতিল হলেও যাঁরা ‘আন–টেন্টেড’ বা ‘যোগ্য’ শিক্ষক–শিক্ষিকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন, তাঁদের চাকরি ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে আগেই জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার সেই মেয়াদ আরও আট মাস বাড়িয়ে দিল শীর্ষ আদালত। ফলে প্রায় ১৩,৮০০ ‘যোগ্য’ শিক্ষকের চাকরি আপাতত আরও কিছুদিন বজায় থাকছে।

কিন্তু প্যানেল বাতিলের সঙ্গে সঙ্গেই চাকরি হারিয়েছেন সব শিক্ষাকর্মী। তাঁদের ক্ষেত্রে কোনও রকম ছাড় দেওয়া হয়নি। অথচ এই শিক্ষাকর্মীদের মধ্যেও প্রায় তিন হাজার জনকে ‘টেন্টেড’ বলে চিহ্নিত করা হয়নি বলে দাবি। তবু চাকরি ফেরেনি তাঁদের। প্রায় ন’মাস ধরে বেতন বন্ধ। সংসারের খরচ, বাড়ির ইএমআই, বয়স্ক মা–বাবার চিকিৎসা এবং সন্তানের পড়াশোনার ব্যয় সামলাতে চরম সঙ্কটে পড়েছেন তাঁরা।

এই ‘বঞ্চিত’ শিক্ষাকর্মীদের অভিযোগ, আদালত থেকে শুরু করে রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কেউই ৩,৩৯৪ জন ‘আন–টেন্টেড’ শিক্ষাকর্মীর বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না।

এর মধ্যেই এসএসসি–র সম্ভাব্য নতুন নিয়োগ–সূচি তাঁদের হতাশা আরও বাড়িয়েছে। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন বছরের ৭ জানুয়ারি একাদশ–দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের মেধা তালিকা প্রকাশিত হতে পারে। ১৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার কথা প্রথম দফার কাউন্সেলিং। নবম–দশম শ্রেণির ক্ষেত্রে মেধাতালিকা চূড়ান্ত হতে পারে ২০২৬ সালের ২৪ মার্চ, এবং কাউন্সেলিং শুরু হতে পারে ৩০ মার্চ।

এই দীর্ঘসূত্রতাই আতঙ্ক বাড়াচ্ছে চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে। সুপ্রিম কোর্ট একাদশ–দ্বাদশ ও নবম–দশম—দু’স্তরেই নিয়োগ প্রক্রিয়া আট মাস পিছিয়ে দেওয়ায় নতুন পরীক্ষা কবে হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। আবেদন প্রক্রিয়া সদ্য শেষ হলেও গ্রুপ–সি ও গ্রুপ–ডি পদে প্রায় ১৬ লক্ষ আবেদনকারীর পরীক্ষা নিতে যথেষ্ট সময় লাগবে বলে কমিশন সূত্রে ইঙ্গিত। এর পাশাপাশি ফেব্রুয়ারিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং তার পর রাজ্যে বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতিও নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলছে। ফলে আপাতত শিক্ষক নিয়োগই কমিশনের ‘প্রায়োরিটি’ বলে জানানো হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শিক্ষক–শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে যে স্পষ্ট বিভাজন তৈরি হয়েছে, তা তাঁদের বক্তব্যেই উঠে এসেছে। 

কিন্তু সেই স্বস্তি চাকরিহারা ‘যোগ্য’ শিক্ষা কর্মীদের ক্ষেত্রে নেই। এক প্রাক্তন গ্রুপ–সি কর্মী বলেন, “৩৫ হাজার টাকা বেতন ছিল। ন’মাস ধরে বন্ধ। ১৯ লক্ষ টাকার হাউস বিল্ডিং লোন, মাসে সাড়ে ১৫ হাজার টাকা ইএমআই। কবে পরীক্ষা হবে কেউ জানে না। একবার ১৮ লক্ষ পরীক্ষার্থীর সঙ্গে বসে পাশ করেছিলাম, এখন আবার ১৬ লক্ষের সঙ্গে লড়াই।”

ফলে এসএসসি মামলা ঘিরে ‘যোগ্য’ শিক্ষক–শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের মধ্যে বৈষম্য ও অসন্তোষ ক্রমেই আরও প্রকট হয়ে উঠছে।


Share