Mamata Banerjee On Sourav Ganguly

আইসিসির চেয়ারম‍্যান হওয়ার কথা ছিল ভারতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। শনিবার ইডেন গার্ডেন্সে বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় মহিলা দলের একমাত্র বাঙালি ক্রিকেটার রিচা ঘোষের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে এমনই মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, বর্তমান বাংলা ক্রিকেট সংস্থা (সিএবি)-র সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় একদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম‍্যান হবেই। তা কেউ আটকাতে পারবে না।

শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, “সৌরভ গঙ্গোপাধ‍্যায় হয়ত দীর্ঘদিন ভারতীয় ক্রিকেট দলে অধিনায়ক ছিলেন। সৌরভকে এটা বললে হয়তো ও দুঃখ পাবে। কিন্তু আমাকে বলতে হবে। আমি একটি ‘আউট স্পোকেন’ আছি। অপ্রিয় সত্য কথা বলে ফেলি। নিজেকে পরিবর্তন করতে পারিনি।”এর পরেই মমতা বলেন, “আজকে আইসিসির প্রেসিডেন্ট কার হওয়ার কথা ছিল? নিশ্চয়ই সৌরভ ছাড়া কেউ নয়?” মুখ্যমন্ত্রী মহারাজের (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) দরাজ প্রশংসা করে বলেন, “আজকে হয়তো ও হতে পারেনি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, ও হবেই হবে। ওকে আটকানো এতো সহজ নয়।”

এর আগে যেদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম‍্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ, সেদিন মমতা সমাজমাধ্যমে জয় শাহের নাম না করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে উল্লেখ করে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, “অভিনন্দন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আপনার পুত্র রাজনীতিবিদ হননি। তার বদলে আইসিসির চেয়ারম্যান হয়েছেন। এই পদটি অধিকাংশ রাজনৈতিক পদের থেকে অনেক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পুত্র সত্যিই অত্যন্ত শক্তিশালী হয়েছেন। ওঁর এই সাফল্যের জন্য আপনাকে অভিনন্দন।”

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলেছেন, “চারিদিকে বন্ধু যেমন আছে, তেমন শত্রুও আছে। তখন অনেক সমস্যাও তৈরি হয়।” তবে ‘শত্রু’ বলতে কী বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, তা স্পষ্ট। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নাম উল্লেখ না করে মুখ‍্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারকেই নিশানা করছেন। কেন্দ্রীয় সরকার যে বাঙালিদেরকে উপেক্ষা করেছে বা করা হচ্ছে, এই বক্তব্যের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী তা বোঝাতে চেয়েছেন বলে মনে করছেন তাঁরা।

ভারতীয় ক্রিকেটে বাঙালি খেলোয়াড়দের মধ্যে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অন্যতম জনপ্রিয় প্রাক্তন ক্রিকেটার। দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও দলের অধিনায়ক ছিলেন। এই বিষয়ে মমতা বলেন, “সৌরভের পরিচয় আপনারা সবাই জানেন। সৌরভ সিএবির সভাপতি আছেন। কিন্তু ওটা ওর পরিচয় নয়। এর পরিচয় অনের বড়। সারা বিশ্ব জোড়া। সারা পৃথিবী জেড়া। সৌরভ বাংলাকে অনেক দিয়েছে। দেশকে অনেক দিয়েছে। বিশ্বকে অনেক দিয়েছে। সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।” অর্থাৎ ক্রিকেট জগতে বাঙালি হিসেবে তাঁর যে কতটা অবদান ছিল, তা-ই মুখ‍্যমন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন। বলেন, “কয়েকটা দৃশ্য তো আমার খুব মনে পড়ে। ও (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) গেঞ্জি খুলে দৌড়ে ছিল। ওঁকে দেখলেই তা মনে পড়ে।”

গত বছর মমতা বলেছিলেন, “সৌরভ আইসিসিতে যাওয়ার যোগ্য। ওকে বঞ্চিত করা হল! বিজেপি সরকারের অনেককে আমি অনুরোধ করেছিলাম। সকলের সামনেও (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে) অনুরোধ করেছিলাম। সৌরভকে পাঠালে দেশের গৌরব বাড়ত। জগমোহন ডালমিয়া, শরদ পওয়ার আইসিসিতে গিয়েছিলেন। তা হলে কোন অজ্ঞাত কারণে সৌরভকে বঞ্চিত করা হল?”

এর পরেই মমতা নাম না করে অমিত-তনয় জয়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে শুরু করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “অন্য কারও জন্য এই জায়গা রেখে দেওয়া হল। আমি কারও নাম বলব না। নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য সত্যিকারের ক্রীড়াপ্রেমীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। সৌরভের জায়গায় সচিন (তেন্ডুলকর), (মহম্মদ) আজহারউদ্দিন থাকলে আমি ওদেরও সমর্থন করতাম। সৌরভ বিশ্ব জুড়ে ক্রিকেট খেলেছে। ও ভদ্র ছেলে বলে কিছু বলেনি। নিশ্চয়ই ওর খারাপ লেগেছে! সেটা নিজের মধ্যে চেপে রেখেছে। এটাকে আমরা সহজ ভাবে নিচ্ছি না। এর মধ্যে রাজনীতি রয়েছে। এক জন মানুষকে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার জন্য এটা করা হয়েছে।”