IIM Calcutta

পুলিশ জোর করে অভিযোগ লিখিয়ে নিয়েছে, জোকা আইআইএম-এ ঘটনা নিয়ে মন্তব্য নির্যাতিতার বাবা, বাড়ছে রহস্য

ধর্ষণের অভিযোগ জানিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতা। সেই বয়ান নিয়ে রহস্য আরও বাড়লেন নির্যাতিতার বাবা।

জোকার আইআইএম ক্যালকাটায় ধর্ষণের অভিযোগ।
নিজস্ব সংবাদদাতা: কলকাতা
  • শেষ আপডেট:১২ জুলাই ২০২৫ ০৭:৫০

অজ্ঞান করে আইআইএম ক্যালকাটা-র ছেলেদের হোটেলে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ওই কলেজেরই এক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রের বিরুদ্ধে। নির্যাতিতা তরুণী পুলিশের কাছে লিখিত বয়ানে এমনটাই অভিযোগ জানিয়েছেন।এ বার সেই অভিযোগ নিয়ে রহস্য বাড়িয়ে তুললেন তার বাবা। অভিযোগকারিণীর বাবার দাবি, হরিদেবপুর থানার পুলিশ জোর করে অভিযোগ লিখিয়ে নিয়েছে। এমনটা তাঁর মেয়েই নাকি জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, তাঁর মেয়ের ওপর কোনও অত্যাচার হয়নি। কেউ খারাপ ব্যবহার করেনি। সে সুস্থ রয়েছে।

পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে নির্যাতিতা জানিয়েছিলেন, গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টা মিনিট নাগাদ তিনি অভিযুক্তের কাউন্সেলিং করতে জোকার আইআইএম কলেজে গিয়েছিলেন। অভিযুক্ত তাঁকে ছেলেদের হস্টেলে নিয়ে যান। নির্যাতিতার লিখিত বয়ান অনুযায়ী, সেখানে ওই তরুণীকে পিৎজা এবং জল খেতে দেওয়া হয়। অভিযোগ, খারার খাওয়ার পরেই তাঁর মাথা ঝিমঝিম করে। এই সময়ে তাঁর বমি পেলে শৌচাগারে যেতে বাধা দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে নাকি অভিযুক্তের ব্যাখ্যা ছিল, হোস্টেলে কোনও মহিলা এসেছে, শৌচাগারে গেলে বাকিরা জেনে যাবে।

অভিযোগকারিণী অভিযোগপত্রে জানান, দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা চলাকালীন আচমকাই মাথার চুল টেনে ধরে অভিযুক্ত। আত্মরক্ষায় পাল্টা চড় মারেন অভিযোগকারিণী। তার পরেই দেওয়ালে মাথা ঠুকে দেওয়া হয়। সংজ্ঞা হারান তিনি। লিখিত বয়ান অনুযায়ী, অর্ধচেতন অবস্থায় তিনি বুঝতে পারেন, তাঁকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। তরুণীর আরও অভিযোগ, তিনি যখন কলেজে ঢোকেন তখন তাঁকে দিয়ে রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। 

তিনি আরও জানিয়েছেন, ঘটনার অনেক পরে জ্ঞান ফিরলে তিনি দেখেন, ওই কলেজের ছেলেদের হস্টেলে রয়েছেন। এর পর তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে প্রথমে ঠাকুরপুর থানায় যান। পরে পুলিশের সহায়তায় হরিদেবপুর থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। 

এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। শনিবার সকালে নির্যাতিতার বাবা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে যা জানিয়েছে তা নিয়ে আরও রহস‍্য বেড়েছে। তাঁর দাবি, “রাত ৯টা ৩৪ মিনিট নাগাদ মেয়ে ফোন করেছিল। বলল ওগাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। জ্ঞান হারিয়েছে। সেটা ঠিক কোথায় (স্থান) হয়েছে তা বলতে পারেনি।” এর পরেই তিনি জানান, “আমি ঘটনাস্থলে যাই। কিন্তু সেখানে ও ছিল না। খবর পাই এসএসকেএম হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিভাগে আছে।”

এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েও মেয়ের দেখা পাননি বলে দাবি করেছেন নির্যাতিতার বাবা। তিনি বলেন, “হাসপাতালে গিয়ে হরিদেবপুর থানা উদ্ধার করে নিয়ে গেছে জানতে পরি। সেখানে যাই। গিয়ে জানতে পারি এই ঘটনার কথা। পুলিশ জানায়, মেয়ে একটা অভিযোগের কথা বলেছে। এফআইআর করেছি। এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিন্তু আমি আমার মেয়ের থেকে যা জানলাম, এমন কোনও ঘটনা হয়নি।”  তিনি বলেছেন, “পুলিশ মেয়েকে বলেছে, আপনি মেডিকেলে গিয়ে এই কথাই বলবেন। মেয়ে আমায় বলেছে, তা আমি বলিনি।” 

এ দিন নির্যাতিতার বাবা পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, “হরিদেবপুর থানা কোথা থেকে পেয়েছে জানি না। মেয়ে বলেছে, আমাকে দিয়ে অভিযোগ লেখানো হয়েছে। হরিদেবপুর থানার কে বলেছে, তা আমি জানি না। তবে অভিযোগ কে লিখিয়েছে, সেটা দু-একদিন পরে আমরা জানতে পারব।” তিনি এ-ও বলেছেন, “মেয়ের উপর কোনও অত্যাচার হয়নি। কেউ খারাপ ব্যবহারও করেননি।”

শনিবার আলিপুর আদালতে অভিযুক্তের আইনজীবী সুব্রত সর্দার দাবি করেন, তরুণীর সঙ্গে সমাজমাধ্যমে আলাপ হয়েছিল তরুণের। পেশায় মনোবিদ তরুণী কাউন্সেলিংয়ের জন্য আইআইএম জোকার লেক ভিউ হস্টেলে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। অভিযুক্তের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁর নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার আর্জি জানান।

যদিও এ দিন সরকারি আইনজীবী আদালতকে জানিয়েছেন, অভিযুক্তের ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকেও নমুনা সংগ্রহ করা হবে। অভিযুক্তের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও আদালতে প্রশ্ন তোলেন তিনি। শনিবার তদন্তকারী আধিকারিক আদালতে বলেন, “মেয়েটি বার বার বলেছেন যে তিনি সংজ্ঞাহীন ছিলেন। অভিযুক্তের ফোন থেকে কিছু ছড়ানো হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।”

নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার সকালেই অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ, শনিবার অভিযুক্তকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হয়। পুলিশের আবেদনের ভিত্তিতে বিচারক আগামী শনিবার (১৯ জুলাই) পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।


Share