21 July TMC Rally

চাইলে তারাও পারে, দেখল কলকাতা পুলিশ, সচল রইল শহর, সন্তোষ প্রকাশ হাই কোর্টের

আগামী বছর রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এটাই ছিল তৃণমূলের শেষ ‘২১ জুলাই’। এ দিন সকাল থেকে শহরে যানজটের চিত্র কার্যত উধাও।

তৃণমূলের শহীদ দিবসে সচল রইল শহর।
নিজস্ব সংবাদদাতা: কলকাতা
  • শেষ আপডেট:২১ জুলাই ২০২৫ ০৭:১২

মিছিলের ভিড় অথবা জনসভা, হাই কোর্টের নির্দেশ অথবা কর্তব্যের ডাক, কলকাতার পুলিশ দেখিয়ে দিল তারা যদি চায় তাহলে পারে। সোমবার শাসকদলের ভিড় সামলাতে ১০০ তে ১০০ পেল কলকাতা পুলিশ। বিনা বাধায় সপ্তাহের প্রথম দিনে অফিস যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছে গেলেন। পুলিশের এই কর্মকাণ্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাই কোর্ট।

আগামী বছর রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে এটাই ছিল তৃণমূলের শেষ ‘২১ জুলাই’। আর এ দিন কলকাতা পুলিশ দেখিয়ে দিল, ‘চাইলে তারাও পারে’। এ দিন সকাল থেকে শহরে যানজটের চিত্র কার্যত উধাও। কোনও বাধার সম্মুখীন না হয়ে নিত্যযাত্রীরা নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছালেন। প্রতি বছর এই দিনে যে ভোগান্তির সম্মুখীন হন সাধারণ মানুষ তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ১০০ তে ১০০ পেয়ে পাশ করে গেল কলকাতা পুলিশ। এক অফিসযাত্রীর কথায়, “রাস্তায় বাস কম থাকার কারণে একটু বেশি ক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কিন্তু কলকাতা পুলিশের তৎপরতায় আমারা সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে সম্ভব হয়েছি।”

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ ছিল, সকাল ন’টার মধ্যে মিছিল শেষ করতে হবে। সকাল ১১টা পর্যন্ত রাস্তায় মিছিল করা যাবে না। ফের মিছিল করতে পারবে ১১টার পরে। একেই শাসকদলের মেগা কর্মসূচি তার ওপর সপ্তাহের প্রথম দিন। এ দিন যাতে নিত্যযাত্রীদের কোনও অসুবিধা না হয় তা নিশ্চিত করার গুরু দ্বায়িত্ব ছিল কলকাতা পুলিশের ওপর। লালবাজার সূত্রের খবর, সোমবার শহরে একটাও যানজটের খরব রিপোর্ট হয়নি। ট্রাফিক সংক্রান্ত কোনও ফোনও আসেনি। সুত্রের খবর, অফিস যাত্রীদের নির্দিষ্ট সময় গন্তব্যে পৌঁছে দিতে কোনও কোনও যায়গায় বিশেষ অটো চালানো হয়েছে।

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের মেগা অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে তৎপর ছিল কলকাতা পুলিশ। গতকাল মধ্যরাত থেকেই রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। লালবাজারের এক পুলিশ কর্তার কথায়, “হাই কোর্ট কড়া নির্দেশ ছিল। সেটাকে বাস্তবায়িত করতে এটা একটা বড় চ‍্যালেঞ্জ ছিল আমাদের কাছে।”

প্রতি বছরের মতো এই বছরের সমাবেশও গতবারের রেকর্ড ভাঙার চ‍্যালেঞ্জ ছিল তৃনমূলের কাছে। আগামী বছর যেহেতু বিধানসভা নির্বাচন তাই এই সমাবেশ ছিল শক্তিপ্রদর্শনের শেষ সুযোগ। তাই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী নির্দেশ দেন তা শুনতে জেলা থেকে কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় করেছিলেন। সেই মতো তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বাস এবং নেতা-নেত্রীদের গাড়ি কলকাতায় এলে কোথায় থাকবে, তার পার্কিং ব‍্যবস্থা কী ভাবে হবে তা নিয়ে কলকাতা পুলিশ নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই করেছে। এ দিন ধর্মতলামুখী যে ক’টি মিছিল এসেছে তা সুষ্ঠু ভাবে সভাস্থলে পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছে কলকাতা পুলিশ। কোনও অব্যবস্থার ছবি দেখা যায়নি।

পুলিশের এই পরীক্ষায় পাশ করে গিয়েছে বলে প্রশংসা করেছেন হাই কোর্টের বিচারপতিরাও। সোমবার সকালে আদালত বসার পরে পুলিশের কাজের প্রশংসা করেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ভাল ভাবে যান নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। পুলিশ কাজ করেছে।’’

এ দিন কলকাতা শহরে বাসের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। যানজটে পড়তে হবে বলে বাইরে সাধারণ মানুষের ভিড়ও কম ছিল। মেট্রোতেও প্রতিদিনের মতোই ভিড় ছিল। শহরের গাড়ির সংখ্যাও ছিল কম। পুলিশ সুত্রের খবর, সমাবেশের শেষে কর্মী-সমর্থকদের বাস কলকাতা থেকে গন্তব্যস্থলে পাঠাতে অন‍্যবারের তুলনায় অনেকটাই কম সময় লেগেছে। প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়েছে। অন‍্যবারে সেটা করতে লাগে তিন-চার ঘণ্টা।

তবে ভোগান্তি থাকলেও তা যে রাস্তায় যানজটের কারণে হয়নি তা-ও নিত্যযাত্রীরা মেনে নিয়েছেন। হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে শহরকে নির্দিষ্ট সময়ে মিছিল এবং যানজট থেকে মুক্ত রাখতে পেরেছে পুলিশ। কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজকুমার বর্মার বাহিনী দেখিয়েছে, ‘তারা পারে’।


Share