BJP News

‘অ‍াব বাঙ্গাল কি বারি হ‍্যায়,’ বিহার জয়ের পরই বাংলায় ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে এ বার কোমর বেঁধে মাঠে নামছে বিজেপি, একাধিক নেতাকে দায়িত্ব বন্টন

ভোটের ফলাফল স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরেই গত শুক্রবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে বিজয়োৎসবের কর্মসূচিতে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভাষণে বিহারের ‘জঙ্গলরাজ’ নিয়ে তো আরজেডি এবং কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন মোদী, কথায় কথায় পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। টেনে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘বিহারের মতো বাংলা থেকেও জঙ্গলরাজ উপড়ে ফেলা হবে।’’

(বাঁ দিকে) অমিত শাহ এবংপ্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)।
বৈশালী কর্মকার, কলকাতা
  • শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৫ ১২:৫০

বিহার জয়ের পেয়েছে এনডিএ। এ বার লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে কোমর বেঁধে মাঠে নামছে বিজেপি নেতৃত্ব। ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ভাল ফলাফল করতে জেলা ধরে ধরে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ভিন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের। তাঁদের মধ্যে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মন্ত্রীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন সাংগঠনিক দায়িত্ব সামলান অভিজ্ঞ নেতারাও৷

বিজেপি সূত্রের খবর, গোটা রাজ্যকে সাংগঠনিক ভাবে ছ’টি ভাগে ভাগ করা হচ্ছে। ছ’টি ভাগে প্রত‍্যেকটিতে এই নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। যে সমস্ত নেতারা অতীতে কঠিন নির্বাচনে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করে দলকে সাফল্য এনে দিয়েছেন, মূলত তাঁদের হাতেই এ বার এলাকা ধরে ধরে ভোটের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হচ্ছে। 

২০১৮ সালে বিজেপি ১৮টি লোকসভা আসন জিতেছিল। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছিল বিজেপির। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন নিচুতলায় সাংগঠনিক ভাবে তৃণমূলের সঙ্গে পাল্লা দেওয়াই বিজেপির এক এবং মূল লক্ষ্য। তার জন্য বুথস্তরে দলীয় শক্তি বৃদ্ধির ওপরেই নজর দিতে চাইছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমানের মতো জেলাগুলিতে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন থেকেই উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে বিজেপি। সেই সব বিধানসভায় নিজেদের শক্তিরে যেমন কাজে লাগাতে চাইছে, তেমন ভাবে গত বিধানসভা নির্বাচনের থেকেও শক্তি বাড়িয়ে ভোটবাক্সে তার ফায়দা পুরোপুরি তুলতে চাইছে তাঁরা। সেই কারণে ছত্তীসগঢ়ের বিজেপির সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা পবন সাইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁকে সাহায্য করবেন উত্তরাখণ্ডের মন্ত্রী ধন সিংহ রাওয়াত।

হাওড়া, হুগলি মেদিনীপুরে বেশ কয়েকটি আসনে বিজেপির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছে বিজেপি। এ বারে তাই একেবারেই হালকা ভাবে নিতেই চাইছে না বিরোধী দলের নেতারা। বিজেপি সূত্রের খবর হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর এই তিন জেলার বিজেপির মূল দায়িত্বে থাকছেন দিল্লির বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) পবন রানা। যদিও বিস্তীর্ণ এই এলাকাকে আরও ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে, আলাদা করে হাওড়া এবং হুগলি জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হরিয়ানার অন্যতম প্রবীণ বিজেপি নেতা সঞ্জয় ভাটিয়াকে। 

আবার দুই মেদিনীপুর জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী জেপিএস রাথোরকে। যেহেতু পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বিজেপির নাক বাঁচানোর লড়াই, তাই এই অংশকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও।

কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণা, এই দুই জেলায় তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তি প্রশ্নাতীত। দক্ষিণ কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগণায় আবার বিজেপির সংগঠন তৃণমূলের চেয়ে অত‍্যন্ত দুর্বল। যদিও গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে কলকাতার বেশ কিছু ওয়ার্ডে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে থাকা ওয়ার্ড যেমন ধরে রাখা যেমন চ‍্যালেঞ্জ তেমনি নতুন ওয়ার্ডও দখল নিতে মরিয়া বিরোধী। সেই মর্মে এই অঞ্চলে সংগঠনের হাল ধরতে হিমাচল প্রদেশের বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সাংগঠন) এম সিদ্ধার্থন-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি কর্ণাটকের বিজেপির তরুণ নেতা সিটি রবিকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নবদ্বীপ এবং উত্তর চব্বিশ পরগণার বিজেপি নেতাদের মতে, মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক-সহ এই অংশে দলের প্রতি বিপুল সমর্থন থাকলেও সাংগঠনিক দুর্বলতার রয়েছে। সে কারণে বেশ কয়েকটি আসনে সেই সমর্থন ভোটবাক্সে প্রতিফলিত হচ্ছে না। এ ছাড়াও মতুয়া এবং বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ যারা, ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে এখানে চলে এসেছেন, তাদের নাগরিকত্বের বিষয়ে সমস্যা রয়েছে। সেই পরিস্থিত বদলাতে অন্ধ্রপ্রদেশের বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) এন মধুকরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও, এখানকার দায়িত্বে থাকবেন উত্তরপ্রদেশের আরেক প্রবীণ বিজেপি সুরেশ রানা।

উত্তরবঙ্গকে বিজেপি গড় হিসেবে চিহ্নিত। তবে সম্প্রতি সেখানেও কিছু ত্রুটি রয়েছে বলে মনে করছে নেতারা। মালদহের শাসকদলেরও গোষ্ঠীকোন্দল রয়েছে। বিজেপি সেখানকার দায়িত্ব দিয়েছে অরুণাচল প্রদেশে নেতা অনন্তনারায়ণ মিশ্রকে। শিলিগুড়ির দায়িত্বে এসেছেন কর্নাটকের তরুণ বিজেপি নেতা অরুণ বীন্নদি। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে নিশীথ প্রামাণিক কোচবিহার থেকে জয়ী হলেও, ২০২৪ সালে সেই আসনটি হাতছাড়া হয়েছে। তাই এখানে ছোট ছোট জনজাতির মানুষেরা বিজেপির থেকে কেন মুখ ফেরাচ্ছে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা।

দার্জিলিংয়ের দায়িত্বে আসছেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র প্রদীপ ভান্ডারী। অতীতে তিনি দিল্লি বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতেও ছিলেন। তাঁকে ওই বিধানসভার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দার্জিলিঙের ছোট রাজনৈতিক দলগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সক্রিয়। তাদের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সেই দিকও বিবেচনা করবেন তাঁরা।

অন‍্যদিকে আলিপুরদুয়ারের বিজেপি নিজের পুরোনো মাটি ফিরে পেতে চাইছে। তার জন্য পরিশ্রম করছে। সেই দায়িত্ব পালন করতে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কৈলাশ চৌধুরীকে পাঠানো হচ্ছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর।

নির্বাচনে ২৪৩টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ২০২টি আসনে জিতেছে এনডিএ। ভোটের ফলাফল স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরেই গত শুক্রবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে বিজয়োৎসবের কর্মসূচিতে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভাষণে বিহারের ‘জঙ্গলরাজ’ নিয়ে তো আরজেডি এবং কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন মোদী, কথায় কথায় পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। টেনে নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘বিহারের মতো বাংলা থেকেও জঙ্গলরাজ উপড়ে ফেলা হবে।’’


Share