প্রায় ১৩ মাস অতিক্রান্ত। জেলবন্দি রয়েছেন সন্দেশখালিকাণ্ডের অভিযুক্ত বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান। এ বার তিনি জেলে বসেই ফোনে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করলেন রবিন মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি। সরবেড়িয়া অঞ্চলেই তাঁর বাড়ি। তাঁর দাবি, ইডি এবং সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ করেছে বলে তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন শাহজাহান এবং তাঁর দলবল। আতঙ্কে কার্যত ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন বলে দাবি ওই পরিবারের।?
সন্দেশখালির পুরাতন সরবেড়িয়া এলাকায় বাড়ি রবিন মণ্ডলের। তাঁর দাবি, সরবেড়িয়ার মোড়ে ‘শেখ শাহজাহান মার্কেট’ নামে যে বড় মাছের বাজারটি রয়েছে, সেটা ওই পরিবারের জমির উপর তৈরি হয়েছে। রবিনের অভিযোগ, তাদের জায়গা দখল করে ওই বাজার তৈরি করেছিলেন তৎকালীন প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা। জমি ফেরানোর দাবিতে ইডি এবং সিবিআইয়ের কাছেও আবেদন করেছিলেন তিনি। অভিযোগের তদন্তে ওই বাজারে অভিযানও চালিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। যদিও সেই মামলা আদালতে ঝুলে রয়েছে।?
রবিন মণ্ডল জানান, গত ১৫ মার্চ শাহজাহান তার ঘনিষ্ঠ মফিজুল মোল্লাকে ফোন করে। মফিজুল তখন রবিন মণ্ডলকে ফোন ধরিয়ে দিয়ে বলে ‘ভাই ফোন করেছে, কথা বল’। তখনই শাহজাহান তাঁকে হুমকি দেয় বলে জানিয়েছেন রবিন। তার পর থেকে আতঙ্কিত রবিন মণ্ডল ও তাঁর পরিবার। তিনি জানিয়েছেন, পুরো ঘটনার বিবরণ-সহ মঙ্গলবার ইডি-কে বিষয়টি জানিয়েছেন। রবিন বলেন, ‘‘মফিজুল মোল্লা শাহজাহানের অনুগামী। শাহজাহানের মাছের আড়তে কাজ করত। মফিজুল হঠাৎই বলে, ‘ভাই ফোন করেছে, কথা বল।’ আমি তখন ফোন ধরে বলি, ‘কে বলছেন?’ ফোনের উল্টো দিক থেকে বলে, ‘আমি শেখ শাহজাহান বলছি।’ তার পরে বলে, ‘খুব বাড় বেড়েছিস। তোরা মার্কেট নিয়ে অতি বাড়াবাড়ি করছিস। তোদের বাড়িঘর ভাঙচুর করব। বোমাবাজি করে দেব। বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেব। বাড়ি থেকে তোর বেরোনো বন্ধ করে দেব।’”?
রবিনের আরও বলেন, “ওই মফিজুল মোল্লা শাহজাহানের ব্যবসা সামলায়। এলাকা দাপিয়ে বেড়ায়।” এ ছাড়াও মফিজুল মোল্লার দলবল প্রতিনিয়ত তাঁকে হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “মফিজুল মোল্লা ওই এলাকায় প্রভাবশালী। মোসলেম শেখ, ওসমান আনসারি এবং নাসির শেখ আগেও আমায় প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিল। আমি এবং আমার পরিবার নিরাপত্তার অভাবে ভুগছি। গোটা বিষয়টা লিখিতভাবে ন্যাজাট থানায় জানিয়েছি।”?
গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতির তদন্তে শাহজাহানের বাড়িতে গিয়েছিল ইডি। সেখানে আক্রান্ত হয়েছিলেন ইডি আধিকারিকেরা। তার কয়েক দিন পরে সন্দেশখালিতে শাহজাহান, তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন স্থানীয়দের বড় অংশ। সন্দেশখালির কয়েক জন মহিলা নির্যাতনের অভিযোগ করেন শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে। ওই বিতর্ক পরে রাজ্য রাজনীতির গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশে ছড়িয়ে পড়ে। নারী নির্যাতন, জমিদখল, মাছের ভেড়ির লিজ়ের টাকা না দেওয়ার মতো বিভিন্ন অভিযোগে বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি পথে নামে। যদিও প্রথম থেকে নারী নির্যাতনের বিষয়টি সাজানো বলে দাবি করে তৃণমূল। ঘটনাক্রমে গ্রেফতার হয়েছেন শাহজাহান এবং তাঁর কয়েক জন অনুগামী। এখন প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি শাহজাহান।?
Share