পাসপোর্ট জালিয়াতিকাণ্ডের আর্থিক দুর্নীতির তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। সেই তদন্তে আগেই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে আজাদ মল্লিক পাকিস্তানের বাসিন্দা বলে তদন্তে উঠে এসেছে। শুক্রবার আদালতে ইডির দাবি, তার দু’টি মোবাইলে ফোনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি আজাদ ইডির প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে দাবি তদন্তকারীদের।?
জানা গিয়েছে, গ্রেফতারের পরই আজাদের দু’টি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। তা ঘাঁটাঘাঁটি করে প্রায় ২০ হাজার পৃষ্ঠার নথি উদ্ধার করা হয়েছে। সঙ্গে পাওয়া গিয়েছে এক লক্ষের বেশি নথি। যা মূলত জাল পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য ব্যবহার করা হত বলে অনুমান করা হচ্ছে। এছাড়াও অসংখ্য ভয়েস মেসেজ আজাদের ফোনে জমা হয়ে ছিল। আজাদ কবে, কখন, কার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, সেসব এখন খতিয়ে দেখছে ইডি।?
এখানেই শেষ নয়। আজাদের মোবাইলের নাকি ২০ হাজারেরও বেশি কন্ট্যাক্ট রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। তিনি নিয়মিত পাকিস্তানের বিভিন্ন মোবাইল বা ফোন নম্বরে কথা বলতেন। সেই সব ব্যক্তি কারা, তাঁদের সঙ্গে আজাদের কী সম্পর্ক, তাঁরা কি আজাদের পাকিস্তানি হ্যান্ডেলার? তা জানতে চাইছে ইডি। হাতে আসা সমস্ত তথ্যপ্রমাণ সামনে রেখেই এবার আজাদকে জেরা করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই ইডি হেফাজতে আজাদকে এনআইএ জেরা করেছে।?
কিন্তু, গোয়েন্দারা যতই আজাদকে বাগে আনার চেষ্টা করুন না কেন, তিনি খালিই হড়কে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, তদন্তে একেবারেই সহযোগিতা করছেন না পাসপোর্ট জালিয়াতিতে ধৃত ওই ব্যক্তি। নানাভাবে কৌশলে গোয়েন্দাদের প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। ইডির এক আধিকারিকের দাবি, এই ধরনের আচরণ পেশাদার গুপ্তচরদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাঁদের এ সব রপ্ত করতে রীতিমতো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাহলে আজাদও কি তেমনই কেউ? উত্তর খুঁজছে ইডি।?
জানা গিয়েছে, আজাদ পাসপোর্ট জালিয়াতি করে যে বিপুল অর্থ উপার্জন করতেন। সেই টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে বাংলাদেশে পাচার করতেন। পাশাপাশি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ৬৫ লক্ষ টাকার জমা করেছেন। সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। বেশ কিছু 'সন্দেহজনক' হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেও যুক্ত ছিলেন তিনি। ২০২০ সালের পর একজন ভারতীয় মহিলাকে মন্দিরে বিয়ে করেন আজাদ! একইসঙ্গে, বাংলাদেশেও তাঁর এক স্ত্রী রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ভারতে শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের নথি কাজে লাগিয়েই 'আজাদ মল্লিক' নামে ভোটার কার্ড তৈরি করান তিনি।?
পাসপোর্ট জালিয়াতিকাণ্ডে আর্থিক তছরুপের তদন্তে গত ১৫ এপ্রিল কলকাতা থেকে জেলায় অভিযান চালায় ইডি। সেদিনই উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটি থেকে আজাদ মল্লিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁকে উত্তর ২৪ পরগনার বিরাটি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ইডি আগেই আদালতকে জানিয়েছে, আজাদ মল্লিক আদতে পাকিস্তানের বাসিন্দা। তারপর সে বাংলাদেশে আসে। সেখান থেকে এ রাজ্যে এসেছে। ভুয়ো নথি তৈরির মতো একাধিক জালিয়াতির অভিযোগে ২০২২ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিগত ১০ বছর থেকে জাল পাসপোর্ট তৈরি কাজ করছে জানা গিয়েছে।?
এ দিন তাঁকে বিচারভবনে পেশ করা হয়েছে। বিচারক কেস ডায়েরি ইডি থেকে নিয়েছেন। আজাদের আইনজীবী আদালতকে জানিয়েছেন, এক মাস ধরে আজাদ ইডির হেফাজতে রয়েছে। কী তদন্ত হয়েছে? আরও পাঁচ দিন হেফাজতে নিয়ে কী করবে? তাই তাঁকে বিচারবিভাগীয় হেফাজত দেওয়া হোক। এহেন আজাদকে ফের একবার পাঁচদিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। কারণ, গোয়েন্দারা মনে করছেন, আজাদের কাছ থেকে তাঁদের আরও অনেক তথ্য পাওয়ার আছে।?
Share