Supreme Court

‘মন্দিরে টাকা দেবতার, তা দিয়ে ধুঁকতে থাকা ব‍্যাঙ্ক চলতে পারে না,’ কেরলের একটি মামলার প্রেক্ষিতে মন্তব‍্য দেশের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের, খারিজ করে ফেরত পাঠালেন হাই কোর্টে

শুক্রবার শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ জানতে চায়, কেরল হাই কোর্টের নির্দেশে কী সমস্যা আছে। উত্তরে ব্যাঙ্কগুলির তরফে আইনজীবী মনুকৃষ্ণন জি জানান, হাই কোর্ট ‘হঠাৎ’ দু’মাসের মধ্যে আমানত ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে। তা পালন করা যথেষ্ট কঠিন হয়ে হচ্ছে। এর জবাবে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, “গ্রাহকদের আস্থা আপনাদেরই সৃষ্টি করতে হবে। গ্রাহক আর আমানত আনতে না পারলে সেটা আপনাদের সমস্যা।”

দেশের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত।
নিজস্ব সংবাদদাতা, দিল্লি
  • শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:০০

মন্দিরের টাকা দেবতার। সেই টাকা দিয়ে ধুঁকতে থাকা ব‍্যাঙ্ককে বাঁচানোর কাজে লাগতে পারে না। এই টাকা এক এবং একমাত্র মন্দিরের স্বার্থের ব‍্যয় করা যাবে। শুক্রবার কেরলের তিরুনেল্লি দেবস্বম মন্দিরের মামলায় এমনই মন্তব্য করলেন দেশের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চ। এর পাশাপাশি, এই মামলা খারিজ করে হাই কোর্টে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

জানা গিয়েছে, কেরলের তিরুনেল্লি মন্দির দেবস্বমের যাবতীয় আমানত রাখা হয়েছিল মোট পাঁচটি কো-অপারেটিভ বা সমবায় ব্যাঙ্কে। কিন্তু আমানতের সেই টাকা ফেরত চাইলে আর পাওয়া যাচ্ছে না। আমানত ভেঙে ‍ব‍্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার কথা মন্দির কর্তৃপক্ষ বার বার বললেও তা করা করা হচ্ছিল না। এর পরেই টাকা ফেরত চেয়ে কেরল হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন মন্দির কর্তৃপক্ষ। কেরল হাই কোর্টের নির্দেশ দেয়, আগামী দু’মাসের মধ্যে আমানতের টাকা অবিলম্বে মন্দিরকে ফেরত দিতে হবে। যদি তারা অ‍্যাকাউন্ট বন্ধ করতে চায়, তা-ও তারা করতে পারবে বলে নির্দেশ দেয় কেরল হাই কোর্ট। হাই কোর্টের সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই ব‍্যাঙ্কগুলি সুপ্রিম কোর্টে যায়। 

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, মন্দিরের টাকা দেবতার সম্পত্তি। সেই অর্থ কোনও ভাবেই সমবায় ব্যাঙ্কগুলিকে সমৃদ্ধ করতে ব্যবহার করা যায় না। শুক্রবার প্রধান বিচারপতি সুর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চে কেরলের কয়েকটি সমবায় ব্যাঙ্কের দায়ের করা মামলার শুনানি ছিল। সেই সময় প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘’আপনারা কি মন্দিরের টাকা ব্যবহার করে ব্যাঙ্ক বাঁচাতে চান? এগুলি এমন সমবায় ব্যাঙ্ক, যা বড় কষ্টে টিকে রয়েছে।” মন্দিরের টাকা ওই সমবায় ব্যাঙ্কে রাখার বদলে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে রাখার নির্দেশ দিলেই বা ক্ষতি কোথায়? ওই সব ব্যাঙ্কে সর্বাধিক সুদ পাওয়া যাবে, তা-ও তিনি মামলাকারী আইনজীবীর কাছে জানতে চান। 

এর পরেই প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন, মন্দিরের অর্থ প্রথমত দেবতার। তাই মন্দিরের এই অর্থ রক্ষা করা, সংরক্ষণ করা এবং শুধুমাত্র মন্দিরের স্বার্থেই ব্যয় করাই বাধ্যতামূলক। এই অর্থ কোনও সমবায় ব্যাঙ্কের আয়ের উৎস হতে পারে না।  এই অর্থ ধুঁকতে থাকা ব‍্যঙ্কের বাঁচার উপায় হয়ে উঠতে পারে না। 

শুক্রবার শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ জানতে চায়, কেরল হাই কোর্টের নির্দেশে কী সমস্যা আছে। উত্তরে ব্যাঙ্কগুলির তরফে আইনজীবী মনুকৃষ্ণন জি জানান, হাই কোর্ট ‘হঠাৎ’ দু’মাসের মধ্যে আমানত ফেরতের নির্দেশ দিয়েছে। তা পালন করা যথেষ্ট কঠিন হয়ে হচ্ছে। এর জবাবে প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, “গ্রাহকদের আস্থা আপনাদেরই সৃষ্টি করতে হবে। গ্রাহক আর আমানত আনতে না পারলে সেটা আপনাদের সমস্যা।” বিচারপতি জয়মাল‍্য বাগচী যোগ করেন, “আমানতগুলির মেয়াদপূর্তির সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাংকগুলির তা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা।”

সমবায় ব‍্যাঙ্কগুলির পক্ষে আইনজীবী জানান, মন্দিরের তরফে কোনও বন্ধের অনুরোধ করা হয়নি। ব‍্যাঙ্কের ওপর গ্রাহকের কোনও অভিযোগও নেই। তিনি বলেন, “আমরা তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী পরিষেবা দিয়েছি। তাঁদের অনুরোধে বিশেষ শাখাও খুলেছি। তাঁরা নিয়মিত ভাবে এফডি পুনঃনবীকরণ করছিলেন। এখন হঠাৎ…।” ব‍্যাঙ্কগুলির দাবি, ব্যাঙ্কগুলি আমানত বন্ধ করতে আপত্তি করছে না। হাই কোর্টের তরফে হঠাৎ ফেরতের নির্দেশেই নাকি সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

শেষ পর্যন্ত শীর্ষ আদালতে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ মামলাগুলি খারিজ করে দিয়েছে। তবে মামলাকারীরা চাইলে সময় বাড়ানোর আবেদন নিয়ে হাই কোর্টে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রসঙ্গত, হাই কোর্ট তিরুনেল্লি সার্ভিস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক লিমিটেড, সুশীলা গোপালন স্মারক বনিতা কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড, মানান্থাওড়ি কো-অপারেটিভ রুরাল সোসাইটি লিমিটেড, মানান্থাওড়ি কো-অপারেটিভ আর্বান সোসাইটি লিমিটেড এবং ওয়েনাড টেম্পল এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড- এই ব্যাঙ্কগুলিকে দেবস্বমের আমানত বন্ধ করে দু’মাসের মধ্যে ফেরত দিতে নির্দেশ দেয়।


Share