Historical Background Behind The Kanth Kali Puja

দেওয়াল কাটতেই মিলেছিল মা কালীর দেখা! মেদিনীপুরের এই ঐতিহ্যবাহী পুজোর জৌলুস অটুট রেখেছেন স্থানীয়েরাই, রইল ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, প্রায় চারশো বছরের পুরোনো এই দেওয়ালে মায়ের মূর্তি ও প্রতীক চিহ্ন রয়েছে। বহু চেষ্টা করেও মন্দিরের সংস্কার ও দেওয়াল থেকে মায়ের মূর্তি সরানো যায়নি। এখানে হিন্দু ধর্মের রীতি মেনেই পাঁঠাবলি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে পুজো হয় তান্ত্রিক মতেই।

পুজোর আগে দেবীকে সাজানোর কাজ চলছে।
দেবব্রত সরকার, মেদিনীপুর
  • শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৫৬

স্বপ্নে দেখা দিয়েছিল মা কালী। তার পর দেবীকে খুঁজতে এক ব্যক্তির কালঘাম ছুটে গিয়েছিল। বহু চেষ্টার পরে দেওয়াল খুঁড়েই মিলেছিল মা কালীর প্রতীক চিহ্ন! পরবর্তী সময়ে চুন-সুরকির দেওয়ালে মায়ের মূর্তি তৈরি হয়। প্রাচীন দেওয়াল। ভগ্নপ্রায় দশা। আজও দেওয়াল থেকে মায়ের মূর্তিকে আলাদা করতে পারেনি কেউ। গল্পটা মেদিনীপুর শহরের কাঁথ কালীপুজো। 

শোনা যায়, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের নুনগোলা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন নন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়। তাঁর বেশ নামডাক ছিল। এক সময় তাঁর সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুশ্চিন্তায় পড়ে যান মুখোপাধ্যায় পরিবার। সেই সময় নন্দগোপাল মুখোপাধ্যায় দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। তাঁর স্বপ্নে এসে স্বয়ং দক্ষিনা কালী মা দেখা দেন! স্বপ্নাদেশে তিনি জানতে পারেন, অবিভক্ত মেদিনীপুরের মীরবাজারে দক্ষিণাকালী রয়েছেন। 

তার পরে তিনি আর সময় নষ্ট করেননি। তড়িঘড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। সটান পৌঁছে যান মীরবাজার এলাকায়। সেখানে পৌঁছে তিনি লক্ষ্য করেন, বটগাছের নীচে কয়েক জন ত্রান্ত্রিক বসে তন্ত্রসাধনা করছেন। আর সেখানেই রয়েছে এক ভগ্নপ্রায় দেওয়াল। সেই দেওয়াল দেখে তাঁর মনে সন্দেহ জাগে। এর পর দেবীর দর্শন পাওয়ার আশায় সেখানেই দেওয়াল খোঁড়া শুরু করেন তিনি।  

অবশেষে, দেওয়াল খুঁড়তে খুঁড়তে দেবীর স্বস্তিক চিহ্ন, দেবীর খাড়া দেখতে পান। এ ছাড়াও, দেখা যায় শিবের পায়ের চিহ্নও। এর পর আর সময় নষ্ট করেননি নন্দগোপালবাবু। সেখানেই তিনি মন্দির তৈরির উদ্যোগ নেন। পরবর্তী সময়ে দেওয়ালে তৈরি হয় মা কালীর মূর্তি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, প্রায় চারশো বছরের পুরোনো এই দেওয়ালে মায়ের মূর্তি ও প্রতীক চিহ্ন রয়েছে। বহু চেষ্টা করেও মন্দিরের সংস্কার ও দেওয়াল থেকে মায়ের মূর্তি সরানো যায়নি। এখানে হিন্দু ধর্মের রীতি মেনেই  পাঁঠাবলি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে পুজো হয় তান্ত্রিক মতেই।

এ দিন কথা হচ্ছিল স্থানীয় বাসিন্দা সুমনজিৎ দে এবং জয়দেব দাসের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, “মা খুবই জাগ্রত। দেওয়ালের উপর খরিস সাপ দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এই প্রাচীন দেওয়াল থেকে মূর্তি সরানো কোনও ভাবেই যায়নি। একসময় এক ব্যক্তি দেওয়াল থেকে মায়ের মূর্তি সরানোর কথা বলেন। কিছু সময় বাদেই সেই ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েন।”

প্রতি বছরের মতো এ বছরও ধুমধাম করে মায়ের পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। শহরের ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ এই পুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকেন। সেই সঙ্গে আশেপাশের জেলা থেকে ভক্তেরাও সেখানে ভিড় জমান।

প্রসঙ্গত, কাঁথ কালীর পুজো মেদিনীপুরে প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম। বহু বছরের পুজো হলেও সেই জৌলুস আজও অটুট রয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা আশিস কুমার মণ্ডল বলেন, এই এলাকার সকলেই পুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকেন। সাধারণ মানুষের জন্য ভোগ প্রসাদের ব্যবস্থাও থাকে।


Share