Leonel Messi

‘গোটা বিশ্বের কাছে পশ্চিমবঙ্গের সম্মানহানি করেছেন,’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে মন্তব্য রাজ‍্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর

সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে মমতা জানান, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে শনিবার সকালে যে ‘অব্যবস্থা’ হয়েছে, তার জন্য তিনি ‘স্তম্ভিত এবং ‘বিচলিত’। এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গড়েছেন তিনি। তদন্তে নেতৃত্বে দেবেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। সকল ক্রীড়াপ্রেমীর কাছেও ক্ষমা চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

যুবভারতীকান্ডের পরে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর।
বৈশালী কর্মকার, কলকাতা
  • শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:৫৭

‘ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও সুজিত বসুর ব্যবসা, দর্শকদের দুরবস্থা,’ যুবভারতীকান্ডে মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে একযোগে আক্রমণ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর কথায়, ফুটবলের রাজপুত্র লিওনেল মেসি

আসা থেকে রাজ‍্যের নেতা-মন্ত্রীরা তাঁর গায়ে ‘জোঁকের’ মতো চিপকে ছিলেন। তাঁকে আনতে সাধারণ মেসিভক্তদের কাছ টাকা থেকে নেওয়া হয়েছে।

শনিবার সকালে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ফুটবলের রাজপুত্র লিওনেল মেসি প্রবেশ করেন। কিন্তু আচমকাই মাঠে উড়ে আসে বোতোল, ভাঙা বাকেট চেয়ার। এর পরেই নির্ধারিত সময়ের আগেই মেসি মাঠ থেকে বেরিয়ে যান। এর পরেই পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। মাঠে নেমে রীতিমতো তান্ডব চালায় মেসিভক্তরা। ভাঙা হয় তাবু, র‍্যাম্প। খেলোয়াড়েরা যেখান থেকে মাঠে প্রবেশ করে, তার শেড লোহার রড দিয়ে ভাঙা হয়। মাঠে পড়ে থাকা কার্পেট কেউ কেউ ফেলে ঘাড়ের করে নিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। ভাঙা বাকেট চেয়ারও কাউকে নিয়ে পালাতে দেখা গিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাঠে নামে র‍্যাফ। তাঁদের মধ্যেও একজনকে রাস্তায় ফেলে মারধর করতে দেখা যায় কয়েকজন দর্শকদের।

যুবভারতীকান্ডের পরে তৃণমূলকে আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুকে মন্ত্রীসভা থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে শনিবার শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “মমতার পাড়ার লোককে দিয়ে তদন্ত করলে চলবে না। আমি নাম করছি না। কর্মরত বিচারপতিকে দিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করতে হবে। কলকাতা বা রাজ্য পুলিশকে তদন্তের বাইরে রাখতে হবে। আমি যা ব‍্যবস্থা নেওয়ার নেবো।” 

মেসিভক্তদের অভিযোগ, তাঁরা টিকিট কেটে মাঠে এসেছেন। তার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করেছেন। মেসিকে দেখাতো দুরস্থ, রাজ্যের নেতা, মন্ত্রী এবং অভিনেতা, অভিনেত্রীদের দেখা মিলেছে। তাঁদের কথায়, যদি জায়েন্ট স্ক্রিনে লিওনেল মেসিকে দেখতে হয়, তাহলে মাঠে কেন আসব? মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে টিকিট কেটে রাজ্যের নেতামন্ত্রীদের দেখতে আসিনি। রাজ‍্য পুলিশ এবং আয়োজকদের বিরুদ্ধে চরম অব‍্যবস্থার অভিযোগ তুলে টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আর তা নিয়েই সরব হয়েছেন রাজ‍্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর কথায়, ফুটবলের রাজপুত্র লিওনেল মেসি যুবভারতীতে ঢোকা মাত্র অন্তত ১০০ জন নেতা-মন্ত্রী ও তাদের আত্মীয় পরিজন, এমনকি সাগরেদদের ভিড় ঘিরে ধরে তাঁকে। ফলে গ্যালারি থেকে তাঁকে দেখার দর্শকদের কোনও উপায় ছিল না। বিরোধী দলনেতা বলেন, “যুবভারতীতে লিওনেল মেসির অনুষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলা, মেসির গায়ে জোঁকের মতো চিপকে রইলেন নেতা-মন্ত্রী-তারকারা। আর যাঁদের পিঠে কাঁঠাল ভেঙে মেসিকে দেখতে পাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে হাজার হাজার টাকার টিকিট কাটানো হল, সেই ফুটবলপ্রেমীদের ভাগ্যে জুটলো ৫-৭ মিনিটের জায়ান্ট স্ক্রিনের দর্শন !!!”

শুভেন্দুর অভিযোগ, “বাইরে জলের বোতল আটকে দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু ভিতরে তৃণমূলের চোরেরা ২০ টাকার বোতল ১০০ টাকা, ২০ টাকার চাউমিন ১৫০ টাকা এবং ২০ টাকার চিপস ২০০ টাকায় বিক্রি করল কারা?, সুজিত আর অরূপের কোন কোন লোকেরা সেখানে স্টল দিল?” এর পরেই শুভেন্দু কটাক্ষ করে বলেন, “তৃণমূল চোর সবাই জানে। তৃণমূলের চুরি সংস্কৃতির একটা উদাহরণ যুবভারতী।”

বারাসত মেডিকেলে মৃতদেহের চোখ চুরির ঘটনা টেনে এনে শুভেন্দু বলেছেন, “তৃণমূল বারাসত মেডিকেলে চোখ চুরি করেছে সবাই জানে। এ বার মেসিকেও চুরি করল। মেসির নাম করে কোটি কোটি টাকা তুলল। সেটা গোটা ভারত তথা বিশ্ব দেখল।” টিকিটের টাকা ফেরতের প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “কীভাবে প্রতারিতদের টাকা ফেরত দিতে হয়, কীভাবে টাকা আদায় করতে হয় তা বিরোধী দলনেতা জানে।”

যুবভারতীতে ফুটবলের রাজপুত্র লিওনেল মেসির অনুষ্ঠানের বিশৃঙ্খলা নিয়ে ক্ষমা চান মুখ্যমন্ত্রী। যুবভারতীকান্ডে ব্যথিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের সমাজমাধ্যমে এমনটাই জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন ফুটবল তারকার কাছে।

সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে মমতা জানান, যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে শনিবার সকালে যে ‘অব্যবস্থা’ হয়েছে, তার জন্য তিনি ‘স্তম্ভিত এবং ‘বিচলিত’। এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গড়েছেন তিনি। তদন্তে নেতৃত্বে দেবেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। সকল ক্রীড়াপ্রেমীর কাছেও ক্ষমা চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।


Share