Leonel Messi

দর্শকদের ‘বিনামূল্যে জল’ দিলে স্টেডিয়াম নোংরা হবে, বলেছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, অতীতের ঘটনা স্মরণ করে দাবি বিশ্বকাপ আয়োজনের অন‍্যতম ডিরেক্টর জয়ের

জয় লিখেছেন, “শনিবার আমি সেই মানুষটিকেই ‘বিভ্রান্ত’ মেসিকে জড়িয়ে ধরতে দেখলাম। তখন মনে হল, কিছুই বদলায়নি। আজও গোটা রাজ্যের ক্রীড়া ও পুলিশ প্রশাসন তাঁর ব্যক্তিগত খেয়ালখুশির জন্যই তৎপর। যদি এঁরাই এ দেশের খেলাধুলার দিশা নির্ধারণ করে যান, তবে আশার আলো খুবই ক্ষীণ।”

লিওনেল মেসির সঙ্গে রাজ‍্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা
  • শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:১৬

অরূপ বিশ্বাস ‘এমনই’। শনিবার যুবভারতীকান্ডের পরে ‘খলনায়ক’ হয়ে গিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার মূলে শাসকদল তৃণমূল থেকে শুরু করে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস রয়েছেন সবার ওপরে। এ বার সমাজমাধ্যমে মুখ খুললেন ফিফার অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ আয়োজকের মধ‍্যে অন‍্যতম ডিরেক্টর জয় ভট্টাচার্য। 

জয় ভট্টাচার্য ফিফার অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ আয়োজক কমিটির অন্যতম ডিরেক্টর হিসেবে তিন বছর কাজ করেছেন। কাজ করেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের টিম ডিরেক্টর হিসেবেও। তাঁর কথায়, অরূপ আছে অরূপেই। নাম না করে তিনি বলেছেন, বিশ্বকাপ ম‍্যাচের দিন স্টেডিয়ামে দর্শকদের জন্য বিনামূল্যে জলের প্যাকেট দেওয়া হোক। কিন্তু তাতে তিনি রাজি হননি। ক্রীড়ামন্ত্রীর দাবি ছিল, দলের প‍্যাকেট হলে স্টেডিয়াম নোংরা হবে। তখন তাঁকে বলা হয়, গোটা স্টেডিয়ামে ২০০টির ডাস্টবিন থাকবে। পাশাপাশি নজরদারির জন‍্য সেচ্ছাসেবকও মোতায়েন থাকবে।

জয় বলেন, “তাতেও তিনি রাজি হননি। ওই দিন সন্ধ্যায় দু’পক্ষের বৈঠক ঘিরে উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। এরই মধ্যে তিনি (অরূপ বিশ্বাস) বলেন, স্থানীয় ক্লাবের সঙ্গে ফিফার কোনও ফারাক নেই।” তা শুনেই রেগে যান জয়। তিনি ওই দিনের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে লিখেছেন, “আমি টেবিল চিৎকার করি। ঠিক কী বলেছিলাম মনে নেই, তবে সেগুলো খুব একটা ভদ্র ছিল না। আর সম্ভবত আমি এটাও বলেছিলাম যে, স্থানীয় প্রশাসন সহযোগিতা না করলে ফাইনাল ম্যাচ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।”

জয়ের কথায়, এতেই কাজ হয়েছিল। তিনি লিখেছেন, “এটা করা আমার পক্ষে সত্যিই খুব বোকামি ছিল। কিন্তু একসময় অতিরিক্ত ভান, অহংকার আর আজগুবি কথাবার্তা সহ্য করারও একটা সীমা থাকে। আশ্চর্যের বিষয়, তাতেই কাজ হয়েছিল। আমরা জলের প্যাকেটের অনুমতি পাই। আর তারপর থেকে মোটামুটি সবকিছু মসৃণভাবেই এগিয়েছিল।” তিনি এ-ও জানিয়েছিল, এটি জলের বিষয়টি তাদের কাছে আপসহীন ছিল। কারণ হিসেবে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “ওই বছর দিল্লিতে উদ্বোধনী ম্যাচে আমরা ইতিমধ্যেই একটি খারাপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরা গ্যালারিতে জল সরবরাহের ডিসপেনসার নিয়ে যেতে দেয়নি। সেই ঘটনার পর আর কোনও ঝুঁকি নেওয়ার প্রশ্নই ছিল না।”

তিনি আরও জানান, “অদ্ভুত ব্যাপার হল, এই একই ভদ্রলোকের (অরূপ বিশ্বাস) জোরাজুরিতেই ফিফা ও রাজ্য ক্রীড়া দফতরের সব বৈঠক সল্টলেক স্টেডিয়ামের একটি কনফারেন্স রুমের করা হতো। আর পুরোটাই সাংবাদিকদের সামনেই হতো। অভিযোগ, “সম্ভবত তিনি সবাইকে দেখানোর চেষ্টা করতেন যে তিনি ফিফার সঙ্গে কতটা ‘দাপটের’ সঙ্গে কথা বলেন।”

এর পরেই তিনি লিখেছেন, “শনিবার আমি সেই মানুষটিকেই ‘বিভ্রান্ত’ মেসিকে জড়িয়ে ধরতে দেখলাম। তখন মনে হল, কিছুই বদলায়নি। আজও গোটা রাজ্যের ক্রীড়া ও পুলিশ প্রশাসন তাঁর ব্যক্তিগত খেয়ালখুশির জন্যই তৎপর। যদি এঁরাই এ দেশের খেলাধুলার দিশা নির্ধারণ করে যান, তবে আশার আলো খুবই ক্ষীণ।”

শনিবারের যুবভারতীতে অব্যবস্থার আর এক নাম পানীয় জল। বিধাননগর পুলিশের তরফে ম্যাচের আগে প্রচার করা হয়েছিল, মাঠে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা থাকবে। জানিয়ে দেওয়া হয়, জলের বোতল ঢুকতে দেওয়া হবে না। খেলাধুলার বড় মঞ্চে বোতল নিয়ে ঢোকা অনেক দিনই বন্ধ। পাউচ প্যাকের জলই সরবরাহ করা হয়। নিখরচায় হোক বা পয়সা নিয়ে। কিন্তু শনিবার স্টেডিয়ামে দেদার জল ও ঠান্ডা পানীয়ের বোতল বিক্রি হয়েছে। নিয়মের তোয়াক্কা না-করে ২০ টাকার জল বিক্রি করা হয়েছে ১৫০-২০০ টাকায়। মেসি চলে যাওয়ার পর ক্রুদ্ধ জনতা সেই বোতলই সব মাঠে ছুড়েছে।

রবিবার দেখা গেল, যুবভারতীর এক নম্বর গ্যালারির বাইরে ঠান্ডা পানীয় ও জলের বোতল পাহারা দিতে দিতে পায়চারি করছেন এক ব‍্যক্তি। তাঁর নাম মহম্মদ রিয়াজ। তিনি দিল্লি থেকে ওই দিন সকালেই কলকাতায় এসেছেন। তিনি জানালেন, যুবভারতীতে জল ও ঠান্ডা পানীয় এসেছিল দিল্লি থেকেই। তিনি বেঁচে যাওয়া বোতল আবার ফেরত নিয়ে যেতে এসেছেন। এখন প্রশ্ন হল, জনপ্রিয় ওই ঠান্ডা পানীয় সরবরাহকারী সংস্থা কলকাতায় থাকা সত্ত্বেও কেন দিল্লিতে তার বরাত দেওয়া হল? এর উত্তর রিয়াজ দিতে পারেননি। তিনি শুধু জানালেন, ৪৫০ পেটি জল এসেছিল। পানীয় এসেছিল ৩৫০ পেটি। ২০০ টাকা করে কেন জল বিক্রি করা হল? উত্তরে রিয়াজ বলেন, ‘‘আমরা দ্বিতীয় একটি সংস্থাকে স্টেডিয়ামে বিক্রির বরাত দিয়েছিলাম। তারা আবার অন্য এক সংস্থাকে বরাত দেয়। তারাই ২০০ টাকায় জল বিক্রি করেছে।’’ চূড়ান্ত অব্যবস্থার এর চেয়ে স্পষ্ট নজির আর কী হতে পারে?

প্রসঙ্গত, শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ যুবভারতীর চার এবং পাঁচ নম্বর গ্যালারির মাঝখানের পথ দিয়ে মেসির গাড়ি এসে থামে যুবভারতীর অ্যাথলেটিক ট্র্যাকের সামনে। মেসি গাড়ি থেকে নামতেই তাঁকে ঘিরে ফেলেন শ’খানেক মানুষ। সেখানে মূলত উদ্যোক্তা, ফোটোশিকারি, নেতা, মন্ত্রী এবং তাঁদের চ্যালাচামুন্ডারা ছিলেন। ফুটবলের রাজপুত্র মেসির গায়ে কার্যত লেপ্টে ছিলেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। প্রভাবশালীদের ভিড় মেসির সঙ্গে সঙ্গে এগোয়, যথেচ্ছ ছবি তোলার চেষ্টায় শুরু হয়ে যায় ধাক্কাধাক্কি। একে অন্যকে সরানোর চেষ্টা বা ধাক্কাই শুধু নয়, মরিয়া ‘সেলফিশিকারি’দের একজনের কনুই গুঁতো মারে লুইস সুয়ারেজের পেটে। এমনটাই জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী। কোনও একজনের নখে ছড়ে যায় রদ্রিগো ডি’পলের হাত। মুখে হাসি বজায় রাখার চেষ্টা করলেও, অস্বস্তি অনুভব করতে থাকেন মেসি। পরিস্থিতি বেগতিক, বুঝে গিয়েছিলেন মেসির নিরাপত্তারক্ষীরাও। তাঁরা আর ঝুঁকি নেননি। দ্রুত মেসিদের সরিয়ে নিয়ে যান মাঠ থেকে।


Share