ED's plea to take custody of West Bengal minister Chandranath Sinha in recruitment scam

নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহকে হেফাজতে নিতে চাওয়ার ইডির আবেদনে আদালতের রায় মঙ্গলবার, চিন্তায় শাসক শিবির

গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন মন্ত্রী। ইডি তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু আদালত তাঁকে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জামিন দেয়। তবে শর্তে আদালত জানিয়েছিল, জামিন পেলেও আপাতত নিজের বিধানসভা কেন্দ্র এবং কলকাতার বাইরে আর কোথাও যেতে পারবেন না মন্ত্রী। তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে তাঁকে। যত দিন এই সংক্রান্ত শুনানি শেষ না-হচ্ছে, তত দিন এই নিয়ম মানতে হবে।

প্রতীকী চিত্র।
ইন্দ্রজিৎ মল্লিক, কলকাতা
  • শেষ আপডেট:২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৩:৫৭

প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের কারা এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহকে ইডির হেফাজতে নেওয়ার আর্জি আপাতত মঙ্গলবার পর্যন্ত পিছিয়ে গেল। আজ শনিবার কলকাতার বিচারভবনে এই মামলার শুনানি হয়। সাত দিনের জন্য রাজ্যের মন্ত্রীকে হেফাজতে চেয়েছিল ইডি। দুপক্ষের সঙ্গে শুনানি শেষে বিচারক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার এই বিষয়ে রায় দেবে আদালত।

প্রাথমিক নিয়োগ দূর্নীতির তদন্তে নেমে মন্ত্রী চন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বেশ কিছু নথি চাওয়া হয়েছিল মন্ত্রীর কাছে। কিন্তু বারবার বলা সত্ত্বেও মন্ত্রী সেই নথি ইডির কাছে দেননি বলেই অভিযোগ। গত মঙ্গলবারের শুনানিতেও সেই অভিযোগ ওঠে। তবে মন্ত্রীর তরফে সেই শুনানিতে দাবি করা হয়, গত ৭ অগস্ট ইডিকে সব তথ্য দেওয়া হয়েছে। যদিও সেই তথ্য পর্যাপ্ত নয় বলেই জানিয়েছেন ইডির আইনজীবী। 

প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তের সময় চন্দ্রনাথকে হেফাজতে নেওয়া হয়নি। তার মধ্যেই চার্জশিট জমা পড়েছে। রাজ্যের কারামন্ত্রীর তরফে আদালতে জানানো হয়েছে যে, জুলাই মাসে চন্দ্রনাথকে তলব করেছিল ইডি। সেই সময় তাঁর আইনজীবীরা গিয়েছিলেন। ৪ অগস্ট চন্দ্রনাথকে ফের ডাকা হলে তাঁর আইনজীবী তদন্তকারী আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে জানাতে চেয়েছিলেন যে, ৭ অগস্ট সব নথি জমা করা হবে।

গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন চন্দ্রনাথ। ইডি তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু আদালত চন্দ্রনাথের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে। তবে কিছু শর্ত চাপিয়েছিল আদালত। জানিয়েছিল, জামিন পেলেও আপাতত নিজের বিধানসভা কেন্দ্র এবং কলকাতার বাইরে আর কোথাও যেতে পারবেন না মন্ত্রী। তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে তাঁকে। যত দিন এই সংক্রান্ত শুনানি শেষ না-হচ্ছে, তত দিন এই নিয়ম মানতে হবে।

গত ৬ অগস্ট এই সংক্রান্ত চার্জশিট দেওয়া হয়। এ দিন আদালতে ইডির আইনজীবী বলেন, “তল্লাশি এবং বয়ান নথিবদ্ধ করার মাঝে পঞ্চম চার্জশিট জমা পড়েছে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু করার নির্দেশ দিয়েছিল। আধিকারিকেরা সেই দিকে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু এর মাঝেও তদন্ত এগিয়েছে।” চন্দ্রনাথের আইনজীবী ইডি হেফাজতের বিরোধিতা করে আদালতে জানান, পরবর্তী তদন্তের জন‍্য অন্য যে কোনও শর্ত দেওয়া হোক। আদালত বললে চন্দ্রনাথ ইডির কাছে তদন্তের স্বার্থে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

চন্দ্রনাথকে সাত দিনের জন্য হেফাজতে চেয়ে ইডির আইনজীবী আদালতে জানান, ২০২৪ সালে তল্লাশি চালিয়ে চন্দ্রনাথের বাড়ি থেকে ৪১ লক্ষ টাকা এবং একটি মোবাইল উদ্ধার হয়েছিল। মন্ত্রী কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে জানিয়েছিলেন, ওই টাকা কৃষিকাজ এবং জমি বিক্রির আয়। ইডির দাবি, মন্ত্রীর কাছে যে সমস্ত নথি আগে চাওয়া হয়েছিল সেগুলো ইচ্ছে করেই দেননি তিনি। চার্জশিট জমা পড়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই পাঠিয়ে দেন।  

ইডির বক্তব্য, ওই মন্ত্রী খুব প্রভাবশালী মানুষ। বার বার নোটিস পাঠিয়ে যে তথ্য পাওয়া যায়নি, তা চন্দ্রনাথ এক দিনের মধ্যে দিয়ে দেন বলে জানিয়েছে ইডি। কেন এত দিন পরে চন্দ্রনাথকে হেফাজতে চাওয়া হচ্ছে, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডির আইনজীবী বলেন, “আমরা এত দিন ঘুমিয়ে ছিলাম না যে, আচমকা ঝাঁপিয়ে পড়ে ওঁকে (চন্দ্রনাথ) হেফাজতে চাইব। ওঁর সম্পর্কে সব তথ্য জোগাড় না-করে গ্রেফতার করতে গেলে চন্দ্রনাথের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা সতর্ক হয়ে যেত। ওঁর বৃহত্তর যোগাযোগ রয়েছে। আমরা বাকি তথ্য পাইনি। এখন আমরা সব তথ্য জোগাড় করেছি, তাই হেফাজতে চাইছি।” 

চন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে ইডির অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাবশালী হয়ে উনি তদন্তকে বিলম্বিত করার চেষ্টা করেছেন।


Share