Leonel Messi

থানায় ধৃতকে দেখতে এসে গ্রেফতার হই! আমরা ভুক্তভোগীরাই অপরাধী! আদালতে কাছে প্রশ্ন আইনজীবীদের, তদন্তভার নিতে পারে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ

ধৃতদের আইনজীবীরা জামিন আবেদন জানালেও আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেনি। ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে তাঁদের। একই সঙ্গে পুলিশের কাছে কেস ডায়েরি তলব করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, যুবভারতীকান্ডের তদন্তভার যেতে পারে বিধাননগরের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে।

যুবভারতীকান্ডে ধৃতদের তোলা হল আদালতে।
নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা
  • শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:০৭

‘থানায় ধৃতকে দেখতে এসে গ্রেফতার হয়েছি।’ যুবভারতীকান্ডে ভুক্তভোগীরাই অপরাধী! তাঁরা  কোনও অপরাধ করেননি। তাই তাঁদের যে কোনও শর্তে জামিন দেওয়া হোক। যদিও আদালত ধৃতদের জামিন মঞ্জুর করেনি। বিচারক তাঁদের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

শনিবারে যুবভারতী স্টেডিয়ামে নিরাপত্তার কারণে লিওনেল মেসির অনুষ্ঠান মাঝ পথে থেমে যায়। এর পরেই উত্তেজিত সমর্থকেরা বাকেট চেয়ার ভেঙে মাঠে ছুঁড়তে শুরু করে। মাঠে বোতল নিয়ে প্রবেশ নিষেধ থাকলেও ভিতরে ২০ টাকার বোতল ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। সেই বোতলও ছোঁড়া হয় মাঠে। এর পরেই মাঠের দখল নেন সমর্থকরা। ভাঙচুর থেকে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। 

ঘটনায় এ দিন প্রথমে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের নাম, বাসুদেব দাস, সঞ্জয় দাস, অভিজিৎ দাস, গৌরব বসু এবং শুভ্রপ্রতিম দে। তাঁদের সোমবার বিধাননগর আদালতে হাজির করানো হয়। যদিও পুলিশ তাঁদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায়নি। জেল হেফাজতের আবেদন জানানো হয়। আর সেখানেই প্রশ্ন তোলেন ধৃতদের আইনজীবীরা। তাঁদের আইনজীবীদের যুক্তি, পুলিশ হেফাজত চাওয়া হয়নি, তাহলে ধৃতদের জামিন দিয়ে দেওয়া হোক।

ধৃতদের জামিনের বিরোধীতা করে সরকারি আইনজীবীর বক্তব্য, “যুবভারতীতে অশান্তির ঘটনায় সরকারি কর্মী, পুলিশ কর্মীরা জখম হয়েছেন। তাঁদের আঘাত কতটা গুরুতর, সেই সম্পর্কিত রিপোর্ট এখনও আসেনি। তাই জেল হেফাজতে থাকাকালীনও ধৃতদের পুলিশ হেফাজতে চাইতেই পারে।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তাঁদের আদৌ দেখা গিয়েছে কি না তা নিয়েও আদালতে প্রশ্ন তোলেন ধৃতদের আইনজীবীরা। তাঁদের কথায়, “আমাদের সিসি ক্যামেরার দেখা গিয়েছে তার কি প্রমাণ আছে? আমরা নিজেরাই ভুক্তভোগী। মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে টিকিট কেটেছিলাম। আমরা মেসিকে দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু মেসিকে দেখতে পাইনি।” তাঁদের আরও প্রশ্ন, “কী প্রমাণ আছে যে তাঁরা ভাঙচুর এবং মারধর করেছে? হাজার হাজার লোকের মধ্যে কী ভাবে তাঁদেরকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হল?”

ধৃতদের মধ্যে বাসুদেব বসু এবং অভিজিৎ বসুর দাবি, “আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে নেই। তাহলে আমাদের কোথা থেকে দেখতে পেলেন?” বাসুদেবের অভিযোগ, “অভিজিতের গ্রেফতারির পরে আমি থানায় গিয়েছিলাম। সেখান থেকেই আমাদের গ্রেফতার করা হয়।” শনিবার যুবভারতীতে যা ঘটেছে তা কিছু লোকের জন‍্যই ঘটেছে। এ দিন আদালতের শুনানিতে ধৃতদের আইনজীবীরা বারবার একই দাবি করেছেন, যে তাঁরাই ভুক্তভোগী। 

শনিবারের ঘটনায় আর এক ধৃত সঞ্জয়ের প্রশ্ন, ‘‘যাঁরা ভাঙচুর করেন, তাঁদের না-ধরে আমাকে কেন ধরা হল?’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমার বাবার ফুলের দোকান রয়েছে। সেখান থেকে টব নিয়ে বলা হচ্ছে, যুবভারতী থেকে নিয়েছি। আমরা ফুলপ্রেমী। আমরা কেন ফুল নষ্ট করতে যাব!’’

অশান্তির ঘটনায় ধৃত শুভ্রপ্রতিম এমবিএ-র পড়ুয়া। দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দা। শুধু তিনি একা নন, ধৃতদের মধ্যে আরও এক জন এমবিএ পড়ুয়া রয়েছেন। শুভ্রপ্রতিমের দাবি, পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি একটি আধাসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তাঁর আবেদন, জামিন না-পেলে ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে।

ধৃতদের আইনজীবীরা জামিন আবেদন জানালেও আদালত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেনি। ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে তাঁদের। একই সঙ্গে পুলিশের কাছে কেস ডায়েরি তলব করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, যুবভারতীকান্ডের তদন্তভার যেতে পারে বিধাননগরের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে।


Share