Bartala Rape Case

কলকাতার ফুটপাথে শিশুকন্যাকে ধর্ষণের মামলায় দোষীর ‘মৃত্যুদণ্ড’, ‘বিরলতম’ ঘটনায় অভিযুক্তের সাজা ঘোষণা করল ব্যাঙ্কশাল আদালত

৩০ নভেম্বর বড়তলা থানার এলাকায় এক সাত মাসের শিশুকন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। সেই মামলাতেই ৪১ দিনের মাথায় দোষী রাজীব ঘোষকে সাজা শোনাল কলকাতার ব্যাঙ্কশাল আদালত। আজ, মঙ্গলবার দোষীকে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পাশাপাশি এই ঘটনাকে বিরলতম ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে আদালত।

বড়তলাকাণ্ডের আসামি রাজীব ঘোষ।
এখন কলকাতা ডেস্ক: কলকাতা
- নিজস্ব চিত্র
  • শেষ আপডেট:১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:০০

কলকাতার বড়তলায় সাত মাসের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় দোষীর মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিল নিম্ন আদালত। আজ, মঙ্গলবার বিকেলে রায় শোনাল কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্ট। বস্তুত, আদালতের এই নির্দেশ নজিরবিহীন। কারণ, নির্যাতিতার মৃত্যু হয়নি। যদিও আদালতের পর্যবেক্ষণ, যে ভাবে সাত মাসের একটি শিশুকন্যাকে অত্যাচার করা হয়েছে, তা বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ। ঘটনার ৮০ দিনের মধ্যে দোষীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি নির্যাতিত শিশুটির পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছে আদালত।? 

গতবছর ৩০ নভেম্বর বড়তলা থানায় শিশু নিখোঁজের অভিযোগ জানিয়েছিলেন ফুটপাথবাসী এক দম্পতি। কয়েক ঘণ্টা পরে ওই ফুটপাথ থেকেই শিশুটিকে উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশ। অভিযোগ, ওই শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তার পর গত ৪ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রাম থেকে রাজীব ঘোষ নামে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনার ২৬ দিনের মাথায় আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। রাস্তার একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে যুবককে চিহ্নিত করেছিলেন তদন্তকারীরা। গতকাল, সোমবার আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে।? 

জানা গিয়েছে, রাজীব ঘোষ নামে ওই যুবকের বয়স ৩৪। তাঁর বাড়ি ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর এলাকায়। নিগৃহীত শিশুটি এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার যৌনাঙ্গে একাধিক ক্ষতচিহ্ন ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তের পর জানিয়েছিল পুলিশ। হাসপাতালে প্রাথমিক পরীক্ষায় যৌন নির্যাতনের প্রমাণও পাওয়া যায়।? 

এই ঘটনায় সোমবার সরকারি আইনজীবী আদালতের বলেছিলেন, ‘‘অজস্র সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমরা দেখেছি। আরজি কর হাসপাতাল থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এসেছিলেন শারীরিক পরীক্ষার জন্য। সেই চিকিৎসকও জানিয়েছেন, এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা। যে ভাবে ওইটুকু শিশুর উপর অত্যাচার করা হয়েছে, তা ভাবা যায় না। আদালত অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।’’? 

বড়তলার ফুটপাথের যেখানে শিশুটিকে পাওয়া যায়, সেখান থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরেই তার বাবা-মায়ের বাস। ঘটনার দিন শিশুটিকে রেখে তাঁরা কোথাও গিয়েছিলেন। সেই সময়ে শিশুটিকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ। ১৩ পাতার চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছিল পুলিশ। তার ভিত্তিতে ব্যাঙ্কশাল আদালতের বিশেষ পকসো কোর্টে বিচারপ্রক্রিয়া চলে। একাধিক ব্যক্তির সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সোমবার ধৃত রাজীবকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। প্রসঙ্গত, বিচারক ইন্দ্রিলা মুখোপাধ্যায় মিত্র আসামিকে পকসো আইন ছাড়াও ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১১৮, ১৩৭ (২), ১৪০ (১), ১৪০ (৪) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছেন।? 

রায় ঘোষণার পরে সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই রায় ঐতিহাসিক। কলকাতা পুলিশ আজ ইতিহাস তৈরি করল। কারণ, এই ঘটনায় নির্যাতিতার মৃত্যু হয়নি। সে ক্ষেত্রে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু আমি সওয়ালে বলি, ৬৫ (২) ধারায় এবং ৬ ধারায় মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়নি যে নির্যাতিতার মৃত্যু হতে হবে। এখানে নির্যাতিতা অসুস্থ। সে যদি সুস্থ হয়ে ফিরেও আসে, সারা জীবন তাকে যন্ত্রণা বহন করতে হবে। এটা আদালতের কাছে বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ।’’? 

ডিসি (উত্তর) দীপক সরকার বলেন, ‘‘সাত মাস বয়সি একটি শিশুর উপর নৃশংস অত্যাচারের খবর পেয়ে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি অভিযুক্তকে ধরতে। তিন-চার দিন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেছি আমরা। নির্যাতিতার পোশাকে পাওয়া অপরাধের বিভিন্ন নমুনার সঙ্গে অভিযুক্তের ডিএনএ মিলে গিয়েছে। সমস্ত তথ্যপ্রমাণ পেয়ে আদালতের মনে হয়েছে, এটি বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘সাত মাসের ওই শিশুটি এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। জানি না, সে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে কি না। তবে তার উপর যে নৃশংস অত্যাচার হয়েছে, সেই অপরাধের ন্যায়বিচার আমরা ৭৮ দিনের মধ্যে এনে দিতে সক্ষম হয়েছি।’’? 


Share