কেলগ-কাণ্ডে তুলকালাম কলকাতার রাজপথ। শুক্রবার, ২০ জুন বিকেলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার চিকিৎসক রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। এই রজতশুভ্রকেই রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল নোটিশ পাঠিয়েছে। তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েই গ্রেফতার হতে হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে।
এ দিন বিকেলে ভবানীপুরের রাস্তা থেকে সুকান্ত এবং রজতশুভ্রকে আটক করে ভবানীপুর থানার পুলিশ। তাঁদের দু’জনকেই লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রজতশুভ্রকে ছাড়া হলেও সুকান্ত মজুমদার-সহ ২৫ জন বিজেপি কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারির প্রতিবাদে বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা পোদ্দার কোর্টের সামনের রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান।

লন্ডনের কেলগ কলেজে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে প্রতিবাদী পোস্টার হাতে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন অধিবাসী চিকিৎসক রজতশুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। রজতশুভ্রকে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল নোটিস পাঠিয়েছে, এই খবর প্রকাশ্যে আসার পর এ দিন বিকেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে সুকান্ত মজুমদার কালীঘাটের বাড়িতে রওনা দেন। কিন্তু ভবানীপুরেই তাঁকে আটকে দেয় পুলিশ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে সুকান্তকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হলে পুলিশের গাড়ির সামনে বসে বিজেপি কর্মীরা বসে পড়েন।
জানা গিয়েছে, সুকান্তকে আটকে দেওয়ার খবর পান চিকিৎসক রজতশুভ্র। তিনি নিজেই বেরিয়ে সুকান্তর সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তখনই তুলকালাম বাঁধে বলে অভিযোগ। বিজেপি কর্মীদের দাবি, সুকান্তর সঙ্গে রজতশুভ্র কথা বলা শুরু করতেই পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে। দু’জনকেই লালবাজারে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধ্যা পৌনে ৭টা নাগাদ রজতশুভ্রকে লালবাজার থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এর পর সাংবাদিকদের সামনে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। রজতশুভ্র বলেন, ‘এমন হেনস্থার শিকার কোনওদিন হইনি। পুলিশকে এর জবাব দিতে হবে।’ তাঁর আরও দাবি, কেলগ কলেজে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলাতেই তাঁকে এই এ ভাবে করা হচ্ছে। সুকান্তকে প্রথমে গ্রেফতার করা হলেও পরে লালবাজার থেকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
ভবানীপুরের ঘটনা নিয়ে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মিরাজ খালিদ বলেন, ‘মোট ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুকান্ত মজুমদার জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পান। তাই কোনও এলাকায় গেলে স্থানীয় থানাকে জানাতে হয়। তিনি তা করেননি। তার যাওয়ার ফলে সাধারণ মানুষের অসুবিধা হয়েছে।’

সুকান্তের গ্রেফতারি নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, পুলিশ প্রশাসনের কথা মেনে চলাই নাগরিকের প্রাথমিক কর্তব্য। কিন্তু বিজেপি নেতারা তা মানেন না। এটা ওদের মাথায় রাখা উচিত। কেন্দ্রীয় নেতা হোক বা রাজ্য নেতা সবাইকেই আইনশৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে।
পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়ে রাজ্যের ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি’ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার। ১৯ তারিখ ডায়মন্ড হারবরে এবং ২০ তারিখ ভবানীপুরে তাঁকে কী অবস্থায় পড়তে হয়েছে, বিজেপির রাজ্য সভাপতি তা বিশদে জানিয়েছেন। তিনি এই বিষয়ে অবিলম্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। শান্তি ফেরাতে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর আর্জিও জানিয়েছেন।