Partha Chatterjee Got Bail From High Court

নিয়োগ দুর্নীতির শেষ মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের শর্তসাপেক্ষে জামিন মঞ্জুর করল কলকাতা হাই কোর্ট, আরও কিছু দিন খাকতে হবে জেলে

১৫ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চে তাঁর বিরুদ্ধে করা সিবিআইয়ের ‘শেষ’ মামলাটির শুনানি হয়। বিচারপতি ঘোষ রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন। আজ, শুক্রবার সেই মামলায় রায় দিল কলকাতা হাই কোর্ট।

রাজ‍্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলকাতা

শেষ আপডেট:২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০১:০০

নিয়োগ দুর্নীতির সব মামলা থেকে জামিন পেলেন রাজ‍্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শুক্রবার হাই কোর্টে বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ সিবিআইয়ের মামলা থেকে পার্থের জামিন মঞ্জুর করেছেন। বিচারপতি ঘোষের এজলাসে শুনানি শেষ হয়েছিল ১৫ সেপ্টেম্বর। একই সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জামিনের বেশ কয়েকটি শর্ত মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট।

এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং সিবিআইয়ের মামলা থেকে পার্থ জামিন পেলেও পুজোর আগে জেল থেকে বেরোতে পারবেন না। সুপ্রিম কোর্টের একটি মামলার শর্তে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর এখনই জেলমুক্তি হবে না। গত ১৮ অগস্ট জামিনের মামলায় শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, জামিন বন্ড করার আগে নিম্ন আদালতকে চার্জ গঠন করতে হবে। এক মাসের মধ্যে সেই চার্জ গঠন করতে হবে। দু’মাসের মধ্যে সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করতে হবে। জানা গিয়েছে, সব সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়নি। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেই নিম্ন আদালত পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে জামিন দিতে পারবে।

শুক্রবার হাই কোর্ট পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বেশ কয়েকটি শর্ত মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে। হাই কোর্ট জানিয়েছে, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে নিম্ন আদালতে পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া কোথাও যেতে পারবেন না। তিনি কোনও সরকারি পদে থাকতে পারবেন না। তদন্তকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে বলেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধায়ক হিসেবে নিজের কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ।

২০২২ সালে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। তার পর থেকেই তিনি জেলবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এর আগে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ইডির করা মামলায় জামিন পেয়েছেন। নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআইয়ের করা মামলাতেও পার্থ চট্টোপাধ্যায় জামিন পেয়েছেন। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথমের দিকে নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে দুটি মামলায় আলিপুর কোর্ট জামিন মঞ্জুর করে। সেখানে তিনি সাত হাজার টাকার ব‍্যক্তিগত বন্ডে জামিন পান রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী। ১৫ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টের বিচারপতি শুভ্রা ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চে তাঁর বিরুদ্ধে করা ‘শেষ’ মামলাটির শুনানি হয়। বিচারপতি ঘোষ রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন।

পার্থ এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দু’টি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা নগদ উদ্ধার করেছিল ইডি। সোনাদানা, বাড়ি মিলিয়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। এর পর গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি-সহ একাধিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর। ইডির পর তাঁকে সিবিআই-ও গ্রেফতার করে। গঠন করা হয় চার্জশিট। পার্থ-ঘনিষ্ঠ অর্পিতা ইতিমধ্যে জামিন পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু পার্থ এখনও জেলে। বার বার জামিন চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। দেখিয়েছেন শারীরিক অসুস্থতার কারণও।

গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর প্রথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আদালতে চার্জশিট দিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। তাতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ছাড়া সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়, অয়ন শীলের নাম রয়েছে। যদিও এই মামলায় পার্থের জামাই কল‍্যাণময় ভট্টাচার্য রাজসাক্ষী হয়েছিলেন। এর পরেই চার্জশিট থেকে নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল কল‍্যাণময়ের। পার্থের আইনজীবীরা আদালতে বার বার প্রশ্ন করেন, কেন তাঁকে জামিন দেওয়া হবে না বলে। কিন্তু সিবিআইয়ের আইনজীবীদের বক্তব্য ছিল, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই দুর্নীতির ‘মূল মাথা’। মন্ত্রীত্ব হারালেও তিনি এখনও প্রভাবশালী। তাঁকে জামিন দিলে, তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে বলেও আদালতকে জানিয়েছিলেন তারা।